শিক্ষার্থী ছাড়াই চলছে প্রাইমারি স্কুল

ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১০টা পেরিয়ে গেলেও শিক্ষক, শিক্ষার্থী কারোরই দেখা নেই। নেই স্কুলের সাইন বোর্ড। প্রতিটি ক্লাসরুমে ঝুলছে তালা। এ যেন একটি ভুতুড়ে অবস্থা। দেখে মনেই হবে না যে এটা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের জয়পুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে একটি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সরেজমিন গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
প্রতিষ্ঠানে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর নামে মাত্র দুজন শিক্ষকের দেখা মিলেছে। পরে সাংবাদিকদের দেখে এ দুজন শিক্ষক তাড়াতাড়ি অন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ফোন দিয়ে ডাকার চেষ্টা করেন। প্রায় ৪০ মিনিট পর দুই শিক্ষার্থীর দেখা মিলেছে।
এমন পরিস্থিতি দেখে স্থানীয় সাধারন মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ২০০৪ সালে এমপিও ভুক্ত হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে পর্যাপ্ত শিক্ষক শিক্ষর্থী নেই। যথাসময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ও বন্ধ করা হয়না। শুধু তাই নয়, জাতীয় পতাকা উত্তোলনও হয়না যথাসময়ে।
এদিকে বিদ্যালয়টির অবকাঠামো দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কয়েকটি ক্লাস রুমে তালা ঝুললেও একটি ক্লাস রুমের দরজা ভাঙ্গা । আবার আরেকটি ক্লাস রুমে নেই দরজা। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শুধু নামেই পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে।
অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষার্থী না থাকলেও বেতন ভাতা ঠিকই নিচ্ছেন শিক্ষকরা। এরই মধ্যে নিয়োগ দিয়েছেন নৈশ প্রহরী ও পরিছন্নতা কর্মী। শিক্ষার্থীরা না থাকলেও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে লাভ কি? প্রশ্ন এলাকাবাসী।
নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে এলাকাবাসীর পক্ষে আব্দুল হাদী নামের এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরিচালক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চারঘাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শিক্ষকদের আচরণের কারণে শিক্ষার্থী আসছে না। শিক্ষকদের ধারণা, শিক্ষার্থী আসুক বা না আসুক বেতন তো ঠিকই পাব। শিক্ষকদের আচরণের কারণে অভিভাবকরাও শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করান না।
বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাদেকুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালে একজন সহকারী শিক্ষক এবং ২০২১ সালে প্রধান শিক্ষক আফরোজা সরকার মারা যাওয়ায় বর্তমানে শিক্ষক সংকট। ফলে অভিবাবকরা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করেন না। শিক্ষক সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতি দাাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সঠিক সময়ে পতাকা উত্তোলন না হওয়া, শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে সঠিক সময়ে উপস্থিত না হওয়া, সাইন বোর্ড না থাকা এবং পতাকা উত্তোলন না হওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবই হয়। কিন্তু একটু দেরিতে। তবে এ বিষয়ে সংবাদ না করার অনুরোধও করেন এ প্রধান শিক্ষক।
মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি চারঘাট উপজেলা শাখার সভাপতি ইমদাদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শিক্ষার্থী না থাকার কারণ অনুসন্ধানে উপজেলার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে ।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সোহেল রানা বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত করছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন বলেন, নানা অনিয়ম উল্লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
-এইচপি