ভাত না খেয়েই ৩৭ বছর পেরিয়ে গেল রাজুর

মাছে ভাতে বাঙালির চিরন্তন প্রবাদ থাকলেও নীলফামারীর সৈয়দপুরের রাজু ইসলামের বেলায় তা খাটে না। জন্মের পর থেকে একবারও ভাত খাননি তিনি। এভাবেই কেটে গেছে তার জীবনের ৩৭টি বছর। এমনকি ভাতের গন্ধও সহ্য করতে পারেন না তিনি। কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেলে আগেই জানিয়ে দেন, তার জন্য যেন বিকল্প খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়। এজন্য তার কখনো কোনো সমস্যাও হয়নি তার। আর এভাবেই সারা জীবন কাটাবার সংকল্প রাজুর।
এদিকে ভাত না খেয়ে কীভাবে থাকেন তিনি, এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। তাকে দেখার জন্য প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন তার বাড়িতে ভিড় করেন। রাজু ইসলাম সৈয়দপুর শহরের ঢেলাপীর উত্তরা আবাসনের পশ্চিমপাড়ার মমতাজ উদ্দীনের ছেলে। পেশায় দিনমজুর রাজু চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। বিবাহিত জীবনে তার ১০ বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে।
রাজু ইসলাম বলেন, জন্মের পর থেকে আমি ভাত বা চালের তৈরি কোনো খাবার খেতে পারতাম না, আমার এই খাবারটা সমসময় গন্ধ লাগে, আর এই গন্ধে বমি হয়। তাই ভাত দেখলেই অস্বস্তি বোধ হয়। আমি সবসময় রুটি, কলা, চিড়া, দই, ফলমূল খেয়ে আসছি, এসব আমার প্রিয় খাবার।
রাজুর বাবা মমতাজ উদ্দীন বলেন, জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত রাজু তার মায়ের দুধ পান করেছে। নিয়ম অনুযায়ী ছয় মাস পর তাকে বাড়তি খাবার হিসেবে চালের তৈরি নরম খাদ্য ও ভাত মুখে দিলে সে ফেলে দিত, বমি করত। যতবার দেওয়া হত, ততবারই সে বমি করত। তারপর থেকে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার খাবারের ধরণ পাল্টে যায়। তাকে শত চেষ্টা করেও আমরা ভাত খাওয়াতে পারিনি।
এ বিষয়ে রাজুর মা সালমা বেগম বলেন, বিভিন্ন সময় চেষ্টা করেও রাজুকে ভাত খাওয়ানো সম্ভব হয়নি। ডাক্তার-কবিরাজ দেখিয়েও কোনো কাজ হয়নি। বরং ভাত দেখলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে যা খেতে পছন্দ করে, ডাক্তার তাকে সেই খাবারই দিতে বলেছেন। ভাত না খেয়েও ছেলে সুস্থ আছে, এটাতেই আমরা খুশি। আমরা দোয়া করি এভাবে আমার ছেলে যুগ যুগ বেঁচে থাক।
রাজুর স্ত্রী সানু বেগম বলেন, বিয়ের আগেই এ বিষয়টি আমি শুনেছি। বিয়ের অনুষ্ঠানে আমাদের বাড়িতে ভাত, পোলাও এবং বিরিয়ানি রান্না হয়েছিল। কিন্তু এসবের কিছুই তিনি খাননি, খেয়েছিলেন রুটি। তবে এ নিয়ে আমাদের সংসারে কোনো সমস্যা হয় না।
সৈয়দপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহিন হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকেই রাজুকে চিনি। তিনি ভাত বা চালের তৈরি কোনো কিছু মুখে দেয় না। এ কারণে পুরো এলাকায় তার একটা পরিচিতি আছে। এজন্য দূর থেকে কৌতূহল নিয়ে অনেকে তাকে দেখতে আসে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাশার বলেন, জীবন-ধারণের জন্য শুধুই যে ভাত খেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। মানুষের বেড়ে ওঠা নির্ভর করে বিভিন্ন খাবারের ওপর। যেমন শর্করা, আমিষ, স্নেহজাতীয় খাবার। উনি যেহেতু ভাত ছাড়া রুটিসহ অন্য সব খাবার খেতে পারেন, সে ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।