দেশীয় অস্ত্র তৈরি ও বাঁশ বিক্রিতে নিষেোজ্ঞা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রশাসনের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় ৫০ জনের বেশি কামার ও বাঁশ বিক্রেতার সঙ্গে বৈঠক করেছে নাসিরনগর থানা পুলিশ।
শনিবার (৬ মে) বৈঠকে কামারদের দেশীয় অস্ত্র তৈরি করতে নিষেধ করা হয়। সেই সঙ্গে বাঁশ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয় দেশীয় অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহার হতে পারে এমন কারো কাছে যেন তারা বাঁশ বিক্রি না করেন।
পুলিশ জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘সংঘর্ষ প্রবণ’ এলাকার মানুষ যেন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে না পড়তে পারে, তা নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপি শাখাওয়াত হোসেন জানান, স্থানীয় কামারদের দেশীয় অস্ত্র তৈরিতে ‘নিরুৎসাহিত করার জন্য সচেততামূলক’ পদক্ষেপ হিসেবে তারা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
নাসিরনগর ছাড়াও জেলার অন্যান্য এলাকাতেও পুলিশের এই কার্যক্রম চলছে বলে সাংবাদিকদের জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
নাসিরনগর থানার ওসি হাবিবুল্লাহ সরকার জানান, বাঁশ, লোহা ব্যবহার করে যেন স্থানীয়রা দেশীয় অস্ত্র তৈরি না করতে পারে তা নিশ্চিত করতে বাঁশ ব্যবসায়ী আর কামারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তারা। কেউ দেশীয় অস্ত্র তৈরি করার জন্য কামারদের অর্ডার দিলে তা যেন পুলিশকে জানানো হয়, সে বিষয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বার্তা দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ তৈরি হওয়ার প্রবণতা রয়েছে আর খুব দ্রুত তা সংঘবদ্ধ সংঘাতে রূপ নেয়। এরকম ক্ষেত্রে অনেক সময়ই দেখা যায় দুই পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
গত দুই সপ্তাহ ধরে নাসিরনগর উপজেলার প্রায় ২৫টি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তিন হাজারের বেশি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
স্থানীয়রা বলছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ট্যাঁটা, পল, চল, বল্লম, রামদা এবং এককাইট্টার মত দেশীয় অস্ত্র। এই অস্ত্রগুলোর মূল অংশ লোহার তৈরি ধারালো পাত, যার সঙ্গে অনেকটা হাতলের মতো ব্যবহার করা হয় বাঁশের লম্বা লাঠি। এ কারণেই বাঁশের বিক্রি নজরদারির মধ্যে রাখতে চায় সেখানকার পুলিশ।
এসপি শাখাওয়াত হোসেন জানান, সরাইল, নাসিরনগর, আশুগঞ্জ, নবীনগর এলাকাগুলোতে গোষ্ঠীগত দাঙ্গার ঘটনা বেশি ঘটে। মূলত গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যায়ে এই সংঘাতগুলো হয়ে থাকে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী অনেক সময় মরণ সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশ পুলিশের ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের প্রতিবেদনে দেখা যায় দেশে অপরাধের মামলা দায়ের হওয়ার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের হয়েছিল কুমিল্লা জেলায়।
-এইচপি