হাসান লিটন, চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচায় দু'হাত হারানো হোসেন কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ায় অর্থিক সহায়তা ও মিষ্টি খাওয়ালেন থানার ওসি।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বেলা ১১ টার সময় দক্ষিণ আইচা থানা পুলিশের আয়োজনে ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাঈদ আহমেদ (পিপিএম) এর সভাপতিত্বে উত্তর চরমানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাদক, কিশোর গ্যাং, ইভটিজিং, জঙ্গিবাদ, বাল্য বিয়ে, ধর্ষণ সহ নানাবিধ সামাজিক অপরাধ রোধে স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং সভা অনুষ্ঠিত হলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখে একটি কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন থানার ওসি।
এতে ওই স্কুলের ২ শত শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করলে ১৫ জন শিক্ষার্থী বিজয় হয়েছেন। তারমধ্যে প্রথমস্থান অধিকার করেন ওই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র দু'হাত হারানো হোসেন। পরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সহকারী পুলিশ সুপার চরফ্যাশন সার্কেল মো. মেহেদী হাসান কুইজ প্রতিযোগীতায় প্রথম বিজয় হওয়ায় দু'হাত হারানো হোসেনকে পুরস্কৃত করার সময় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দরা আবেগ আপ্লূত হয়ে পরেন। এসময় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ও শিক্ষার্থীবৃন্দ সহ থানার অফিসার ফোর্সগন উপস্থিত ছিলেন।
পরে থানার ওসি বিজয় হওয়ায় হোসেনকে থানায় আমন্ত্রণ জানালে ওইদিন সন্ধ্যায় হোসেন থানায় উপস্থিত হলে তাকে মিষ্টি খাওয়ানো সহ পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থিক সহায়তা প্রদান করেন দক্ষিণ আইচা থানার ওসি সাঈদ আহমেদ।
হোসেন উত্তর চরমানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। এবং দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়ন ৪ নম্বর ওয়ার্ড চার্চ কলোনীতে বসবাসরত দরিদ্র অটোচালক শাহাবউদ্দিনের ছেলে।
এসব বিষয়ে নিশ্চিত করে দক্ষিণ আইচা থানার ওসি মো. সাঈদ আহমেদ বলেন, হোসেনের সাথে কথা বলে এবং বিভিন্ন প্রশ্ন করে বুঝতে পারলাম সে অত্যন্ত মেধাবী তাই তাকে থানায় আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি খাওয়ানো সহ আমার পক্ষ থেকে তাকে অর্থিক সহায়তা প্রদান করি। ভবিষ্যৎও হোসেনের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আমার পক্ষ থেকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
হোসেনের মা রহিমা বেগম দক্ষিণ আইচা থানার ওসি মো. সাঈদ আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, প্রাইমারি স্কুল থেকে পাস করলে তাকে যখন হাই-স্কুলে ভর্তি করাতে নিলাম। তখন স্কুলের প্রধান শিক্ষক হোসেন কে ভর্তি করতে চাননি। যার হাত নেই সে লিখবে কিভাবে এই প্রশ্ন করে প্রধান। হোসেন পা দিয়ে লিখে পঞ্চম শ্রেনি পাস করেছে অনুরোধ করলে পরে স্কুলে ভর্তি করেন প্রধান শিক্ষক।
বর্তমানে আমার ছেলে হোসেন খুব মেধাবী এবং পড়াশোনা করতে আগ্রহী। তিনি আরও জানান, গত ২০১৫ সালের (১০ আগষ্ট) সকাল ৯ টার সময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পড়াশোনা করার সময় ছাদের উপর দিয়ে ১১ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক তাঁর জড়িয়ে হোসেন বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়, ঢাকায় নেওয়া হলে জীবন বাচাঁনের জন্য তার
দু'হাত কেটে ফেলের সিদ্ধান্ত দেন চিকিৎসকরা। হোসেনের এই দূর্ঘটনায় আমার প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। কিন্তু তার হাত লাগাতে পারেনি। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে যদি কৃত্রিম হাত লাগানো যেত তাহলে প্রতিভাবান হোসেন ফিরে পেত আগের মতো স্বাভাবিক জীবন।
উত্তর চরমানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন জানান, হোসেন মেধাবী ও প্রতিভাবান। পা দিয়ে লিখলেও অনেকের চেয়ে হাতের লেখা সুন্দর । আমাদের বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকরা হোসেনের প্রতি আন্তরিক।
লালমোহননিউজ/ জেডি-এইচপি