আবেগ-ভালোবাসা, সুসংবাদ আর দুঃসংবাদ বিলি করেন তিনি

আবেগ-ভালোবাসা, সুসংবাদ আর দুঃসংবাদ বিলি করেন তিনি
রূপেন চন্দ্র দে।

৫৮ বছর বয়সী রূপেন চন্দ্র দে। কাজ করেন ডাকপিয়ন হিসেবে। প্রায় ৩৪ বছরের কর্মজীবনে বিলি করছেন মানুষের আবেগ-ভালোবাসা, সুসংবাদ আর দুঃসংবাদের চিঠি। রূপেন চন্দ্র বর্তমানে কর্মরত ভোলার লালমোহন পোস্ট অফিসের প্রধান শাখায়।

তিনি বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের মুলাইপত্তন গ্রামের বাসিন্দা। তবে চাকরির তাগিদে বিভিন্ন সময় মিলে প্রায় ২৯ বছর দায়িত্ব পালন করছেন লালমোহনে। সততা আর আন্তরিক ব্যবহারের কারণে এখানকার মানুষের অতি পরিচিত জনে পরিণত হয়েছেন রূপেন চন্দ্র দে।

রূপেন চন্দ্র দে বলেন, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত মাস্টার রুলে ৩১০ টাকা বেতনে ডাকপিয়নের চাকরি করেছি। এরপর ১৯৮৯ সালে চাকরি সরকারি হয়। তখন প্রথম বেতন স্কেল ছিল ৬৫০ টাকা। বর্তমানে সে বেতন ৩৫ হাজার টাকা। এখন অবসরের সময় হয়েছে। এই ডাকপিয়নের চাকরিতে এরইমধ্যে কেটে গেছে জীবনের প্রায় ৩৪ বছর।

তিনি বলেন, চাকরি জীবনে মনপুরা, তজুমদ্দিন, দুলারহাট, মির্জাখালু, লর্ডহার্ডিঞ্জ, গজারিয়া ও লালমোহন শাখায় কাজ করেছি। এই ৩৪ বছরে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি নানা প্রকার চিঠি। কারো কাছে পৌঁছে দিয়েছি তালাকের চিঠি, কারো বাসায় গিয়েছে চাকরির চিঠি নিয়ে। মানুষের কাছে গিয়েছি এনজিও, গার্মেন্টেসের চিঠি নিয়েও। তবে চিঠি নিয়ে গিয়ে সবচেয়ে ভালো লাগতো যখন প্রবাসীদের বাড়িতে যেতাম। প্রবাসীদের একটি চিঠির জন্য যেন আমার অপেক্ষায়ই থাকতেন তাদের স্বজনরা।

অধিকাংশ সময় হেঁটেই চিঠি পৌঁছে দিতেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ১০-১২ বছর ধরে প্রবাসীদের তেমন চিঠি আসে না। কারণ এখন সবার কাছেই মোবাইল রয়েছে। তবে এখনো চিঠি আসে সরকারি-বেসরকারি দফতর থেকে। এসব চিঠি খুব গুরুত্ব সহকারে পৌঁছে দেই প্রাপকের কাছে।

ডাকপিয়ন রূপেন চন্দ্র দে আরো বলেন, আমার সংসারে স্ত্রীসহ এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে। এই চাকরি করেই ছেলে-মেয়েকে মানুষ করেছি। সংসার চালিয়েছি। ছেলে এখন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর মেয়েকে ডিগ্রি পাস করার পর বিয়ে দিয়েছি। চাকরির প্রথম থেকে বেশ কয়েক বছর বেতন কম ছিল। তবুও কোনো আক্ষেপ ছিল না আমার। কারণ আমি মানুষের ভালোবাসা পেতাম।

তিনি বলেন, ডাকপিয়ন হিসেবে কাজ করে মানুষের সঙ্গে খুব সহজে মিশতে পারছি। অনেকের কাছে আমি প্রিয়। মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। এটাই আমার কাছে তৃপ্তির বিষয়। আর মাত্র কয়েক মাস আছে এই চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের। অবসরের পর চেনা মানুষদের সঙ্গে তেমন দেখা হবে না। আড্ডাও হবে না খুব কাছের পরিচিতজনদের সঙ্গে। অবসরের পরের দিনগুলো যেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালোভাবে কাটাতে পারি, সেজন্য সবার আশীর্বাদ কামনা করছি।

ডাকপিয়ন রূপেন চন্দ্র দে’র কর্মকাণ্ডের বিষয়ে লালমোহন পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার মো. আলমগীর হোসাইন বলেন, তিনি সব সময় নিজের দায়িত্বের প্রতি একজন শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি। একইসঙ্গে তিনি একজন ভালো মানুষও। রূপেন চন্দ্র দে সব সময় স্বচ্ছভাবে কাজ করেন। আমি নিজেও তার কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ।

লালমোহননিউজ/ -এইচপি