ছেলের সঙ্গেই এসএসসি দিচ্ছেন ৫০ বছরের বাবা

ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল উচ্চশিক্ষার। ইচ্ছে থাকলেও অভাব তাকে এগুতে দেয়নি। অষ্টম শ্রেণির পর আর সম্ভব হয়নি পড়ালেখা। দীর্ঘ বিরতির পরে ফের সেখান থেকেই আবার শুরু করেন। বর্তমান ৫০ বছর বয়সে এসেও হাল ছাড়েননি। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। ছেলে আসিফ তালুকদারের সঙ্গে এবার এসএসসি পরীক্ষায় বসেছেন জাহাঙ্গীর আলম বাবু।
জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের বিশাড়দিয়াড় গ্রামে। বাবা ও ছেলে মথুরাপুর মুলতানি পারভীন শাহজাহান তালুকদার (এমপিএসটি) উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র।
আসিফ এমপিএসটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। জাহাঙ্গীর আলম বাবু পরীক্ষা দেন একই স্কুলের কারিগরি শাখা থেকে চিকাশি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম ইন্সটিটিউট কেন্দ্রে। পেশায় তিনি এমপিএসটি উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশাড়দিয়াড় গ্রামের শামসুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। ছোটবেলা থেকেই তার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ ছিল। কিন্তু ১৩ বছর বয়সে তার মা-বাবা মারা যান। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। অভাবের কারণে আর লেখাপড়া করা হয়নি। কোমল হাতে সংসারের হাল ধরেন। জড়িয়ে পড়েন কৃষি কাজে। ২০ বছর বয়সে বিয়ে করেন।
বাবুর দাম্পত্য জীবনে এক মেয়ে ও দুই ছেলেসন্তান। বড় মেয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করেন। বড় ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আর ছোট ছেলে কেজি স্কুলে প্লেতে লেখাপড়া করছে।
আসিফ তালুকদার জানায়, লেখাপড়ার কোন বয়স নাই। বাবার সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আমি গর্ববোধ করছি। দোয়া করবেন আমি যেন সরকারি চাকরিজীবী হতে পারি।
জাহাঙ্গীর আলম বাবু বলেন, সমাজে আর দশজন মানুষের মতো নিজেকেও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যেন পরিচয় দিতে পারি, সেই উদ্দেশ্যেই লোকলজ্জার ভয় দূরে ঠেলে নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে এই বয়সে লেখাপড়া শুরু করেছি। পড়ালেখায় তিনি শিক্ষকদের পাশাপাশি পরিবারের সহযোগিতা নেন।
এমপিএসটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, শিক্ষা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। অদম্য এ ধরণের উদাহরণ সমাজের জন্য খুবই ইতিবাচক। নতুন প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করবে। এই বাবাকে দেখে সাধারণ মানুষ লেখাপড়ায় আরো অনুপ্রাণিত হবে বলেও মনে করছি।
ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের সচিব অধ্যক্ষ বিকাশ চন্দ্র সাহা বলেন, শিক্ষার আসলে কোনো বয়স নেই। তিনি এই বয়সে সেটা বুঝতে পেরে লেখাপড়া শুরু করেছেন সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।
-এইচপি