তজুমদ্দিনে ত্রিশ নারীর মিনি গার্মেন্টস

তজুমদ্দিনে ত্রিশ নারীর মিনি গার্মেন্টস
ছবি: লালমোহন নিউজ

এম. নয়ন, তজুমদ্দিন থেকে: নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে এখন আর কোনো অংশে পিছিয়ে নেই নারীরা। সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নারীরা আজ সরকারি-বেসরকারি চাকরির পাশাপাশি বড় উদ্যোক্তাও হচ্ছেন। তেমন-ই ভাবে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন ভোলার তজুমদ্দিনের জেলে পরিবারের ৩০ নারী। তারা উপজেলার শশীগঞ্জ এলাকায় স্থাপন করেছেন একটি মিনি গার্মেন্টস। যার নাম রাখা হয়েছে ‘মেঘনা ক্রিয়েটিভ এন্টারপ্রাইজ’। আগামী ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এ মিনি গার্মেন্টেসের নারীরা পাড় করছেন ব্যস্ত সময়।   

জানা যায়, মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট কম্পোনেন্ট-৩ এর অর্থায়নে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) বাস্তবায়নে ইবি টেক্সের মাধ্যমে ২০২২ সালের নভেম্বর মাস থেকে তজুমদ্দিনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ‘সুইং মেশিন অপারেশন’ প্রশিক্ষণ শুরু হয়। জেলে পরিবারের যুব-যুবতীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। তাদের কাছ থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে এই ৩০ নারী ‘মেঘনা ক্রিয়েটিভ এন্টারপ্রাইজ’ নামের মিনি গার্মেন্টসটি চালু করেন।  

‘মেঘনা ক্রিয়েটিভ এন্টারপ্রাইজ’ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত টুম্পা রাণী দাস বলেন, আমরা এসডিএফের সহযোগীতায় সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এখন টিশার্ট, প্লাজু, টাউজার, পায়জামাসহ বিভিন্ন পোশাক তৈরি করছি। আগামী ঈদকে সামনে রেখে আমাদের গার্মেন্টেসে এখন কর্ম ব্যস্ততা। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে সুযোগ-সুবিধা পেলে এই ছোট গার্মেন্টসটি এক সময় বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। তখন আমরা ভোলা, বরিশাল ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই গার্মেন্টেসে তৈরি পোশাকের বাজার সৃষ্টি করতে পারবো। আশা করি এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একদিন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবো।

সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) এর তজুমদ্দিনের ক্লাষ্টার অফিসার এমএ কাদের বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন সাসটেইনেবল কোস্টাল কম্পোনেন্ট-৩ এর বাস্তবায়নে এবং সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় ইবি টেক্সের মাধ্যমে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে তজুমদ্দিনের ৩০জন নারী একটি মিনি গার্মেন্টস দিয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মেঘনা ক্রিয়েটিভ এন্টারপ্রাইজ’। গত ৩ মাসে ওই গার্মেন্টেসের নারীরা স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী ১হাজার ৬শত পিস টি-শার্ট, ৬শত পিস ফতুয়া, ৭শত পিস পায়জামা, ৮ শত পিস প্লাজু ও ৪শত পিস বালিশের কাভার তৈরি করে বাজারজাত করেন। এসব নারীরা যদি সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পান তাহলে ভোলার বুকে একটি বড় গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা আত্মপ্রকাশ করতে পারবেন বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা।

তজুমদ্দিনের মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা মো. আল-আমিন জানান, সমুদ্র সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও উপকূলের মৎস্যজীবী গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া সময় উপযোগী ও বিশেষ প্রকল্প ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল ও মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট’। যা বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের অর্থায়নে কম্পনেন্ট-৩ এর মাধ্যমে জেলে পরিবারের যুব-যুবতীদের উপযোগী করে তোলার লক্ষে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রাখা  হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে এসডিএফের সহযোগীতায় ইবি টেক্সের মাধ্যমে সুইং মেশিন অপারেশন প্রোগ্রাম থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩০জন নারী সদস্য ‘মেঘনা ক্রিয়েটিভ এন্টারপ্রাইজ’ নামে মিনি গার্মেন্টস চালুর মাধ্যমে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

তিনি আরো জানান, এ প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা হিসেবে সব সময় তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগীতার মাধ্যমে এ মিনি গার্মেন্টেসের নারীদের সঙ্গে থাকবো। শুধুমাত্র প্রকল্প চলাকালীন সময়ে নয়, প্রকল্প সমাপ্তির পরেও যদি এসব নারীদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয় তাহলে ভোলার জেলে সম্প্রদায়ের আগামী প্রজন্ম হয়ে উঠবে স্মার্ট ও কর্মদক্ষ। আর এতে করে ভোলা জেলা হয়ে উঠবে শিল্প প্রতিষ্ঠানের তীর্থস্থান।

লালমোহননিউজ/ -এইচপি