৯০ বছরেও বৃদ্ধ নজির আহম্মদের রোজ জীবিকার সংগ্রাম!

৯০ বছরেও বৃদ্ধ নজির আহম্মদের রোজ জীবিকার সংগ্রাম!
বৃদ্ধ নজির আহম্মেদ। ছবি: লালমোহন নিউজ

প্রায় ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধ নজির আহম্মদ হাওলাদার। দুঃখ-কষ্টের যেন শেষ নেই তার। শরীরে নানান রোগ, তবুও রোজ তাকে করতে হয় জীবিকার সংগ্রাম। নজির আহম্মদের এক ছেলে, এক মেয়ে এবং ঘরে অসুস্থ্য স্ত্রী রয়েছেন। ছেলে বিয়ে করে পরিবার নিয়ে থাকেন অন্যত্র। মেয়ে বিয়ে দেওয়ায় সে শ্বশুর বাড়িতেই থাকেন। এখন ঘরে কেবল অসুস্থ্য বৃদ্ধা স্ত্রী।

ওই স্ত্রীকে নিয়ে ভোলার লালমোহন উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি একটি আশ্রয়ণের ঘরে বাস করেন বৃদ্ধ নজির আহম্মদ। এরআগে একই ইউনিয়নের কর্তারকাচারী এলাকার গাইন বাড়ি এলাকায় অন্যের জমিতে পরিবার নিয়ে বাস করতেন নজির আহম্মদ। প্রায় ১২ বছর আগে নদীতে নিজের বসতঘর বিলীন হওয়ার পর সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। 

বৃদ্ধ নজির আহম্মদ জানান, আমার সংসারে ছিল এক ছেলে, এক মেয়ে এবং স্ত্রী। এরমধ্যে ছেলে বিয়ে করে পরিবার নিয়ে নোয়াখালীতে থাকে আর মেয়েকে বিয়ে দেওয়ায় সে থাকে শ্বশুর বাড়ি। এখন সংসারে আমি আর আমার বৃদ্ধা স্ত্রী। ছেলের ভালো লাগলে কয়েক মাস পর পর পাঁচশত-এক হাজার টাকা পাঠায়। তা দিয়ে তো আর সংসার চালাতে পারি না। আগে ক্ষেতে-খামারে কাজ করে সংসার চালাতাম। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভারি কোনো কাজ করতে পারছি না। তাই মিঠাই আর বাদাম দিয়ে কটকটি বানিয়ে বিভিন্ন এলাকায় হেঁটে হেঁটে গিয়ে বিক্রি করছি। এতে করে দৈনিক আড়াইশত থেকে তিনশত টাকার কটকটি বিক্রি করতে পারি। যেখান থেকে লাভ হয় একশত থেকে দেড়শত টাকা।

ওই লাভের টাকায়ই বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে কোনো রকমে খেয়ে-পরে বেঁচে আছি। খাওয়া বলতে; তিন বেলা ভাত আর ডাল-শাকসবজি। কারণ কটকটি বিক্রি করে যা আয় হয় তা চাল কেনাসহ সংসারের অন্যান্য জিনিসপত্রের পেছনে ব্যয় হয়ে যায়। এছাড়া এই শীতে কষ্টও বেড়েছে। কারণ পুরোনো ছোট ছোট দুইটি কম্বল দিয়ে আমি আর স্ত্রী কোনো রকমে শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করি। তবে ছোট ওই কম্বলে শীত থেকে তেমন রক্ষা মেলে না। 

তিনি আরো জানান, গত এক বছর ধরে আমার বৃদ্ধা স্ত্রী অনেক অসুস্থ্য। তার কোমড়ে প্রচণ্ড ব্যথা। যার জন্য সে নড়াচড়া করতে পারে না। তাই সারাদিন কটকটি বিক্রি শেষে ঘরে ফিরে নিজেকেই রান্নাবান্না করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য থাকায় স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়েছিলাম। চিকিৎসক ওষুধ লিখে দিয়ে তা কিনে নিয়মিত খেতে বলেছেন। এরপর এক হাজার টাকার ওষুধ খাওয়াতে পারলেও অর্থাভাবে আর ওষুধ খাওয়াতে পারিনি। নিজেরও শরীরজুড়ে নানান রোগ। টাকার অভাবে নিজেরও চিকিৎসা করাতে পারছি না।

তবে আমার নামে একটি বয়স্ক ভাতা রয়েছে। প্রতি তিন মাস পর পর সেখান থেকে ১৮শত টাকা করে পাই। তিন মাসে ১৮শত টাকায় কিছুতেই কিছু হয় না। সব মিলিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি। তাই আমার বৃদ্ধা স্ত্রীকেও একটি বয়স্ক ভাতা প্রদানসহ তার এবং আমার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা, এই শীত থেকে রক্ষা পেতে ভালো কম্বল ও খাওয়ার জন্য চাল সহযোগিতা পেতে সমাজের বিত্তবান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহ আজিজ বলেন, ওই বৃদ্ধের সম্পর্কে দ্রুত সময়ের মধ্যে খোঁজ-খবর নিয়ে তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।