শুকনো খাবার নিয়ে ছুটছেন চরফ্যাশনের ইউএনও

হাসান লিটন, প্রতিনিধি, চরফ্যাশন (ভোলা): সব থাকার পরও গত দু’দিন আমরা না খেয়ে আছি । ঘরের ভীটার উপর দিয়ে বয়েগেছে পানির ঢেউ। চুলাভর্তি পানি। নেই রান্নার সুযোগ। খাবারের জন্য ছেলে-মেয়েদের কান্না আর সহ্য করতে পারছি না। নীচে জোয়ারের পানির সাথে মাথার উপর ঝরতে থাকা অবিরাম বৃষ্টিতে আমরা অসহায় হয়ে পরেছি। তাই একটু খাবারের জন্য ত্রানের লাইনে দাড়িয়েছি। চর মানিকা আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা ফাতেমা, রিপাদের মতো চরফ্যাশনের বিভিন্ন গ্রামের দূর্গত মানুষের কষ্টের প্রকাশ এমনই।
মঙ্গলবার (২৮ মে) বিকালে উপজেলার জাহানপুর, চরমানিকা, চরকলমী, নজরুল নগর এবং আবদুল্লাহপুরের দূর্গত এলাকা ঘুরে বিভিন্ন স্থানে ত্রানের জন্য অভূক্ত দূর্গত মানুষের ভীর দেখা গেছে। পাশাপাশি মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে প্যাকেটভর্তি শুকনো খাবার নিয়ে মূল ভূখন্ডের এসব দূর্গত মানুষের ঘরে ঘরে ছুটে গেছেন চরফ্যাশনের ইউএনও নওরীন হক। সরেজমিনে দেখাগেছে, দূরবর্তী ঢালচর, পাতিলা, মুজিব নগর ইউনিয়নসহ মূল ভূখন্ডের বেড়িবাধেঁর বাহিরের মেঘনা, তেতুলিয়া এবং মায়া-নদীর কূলের বসতিগুলো ঘূর্ণিঝড় রিমেলের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।
উপজেলা পরিষদের প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী এখানে প্রায় ৬ হাজার বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অধিকাংশ ঘরের ভেতর দিয়ে জলোচ্ছ্বাসের পানি বয়েগেছে। ঘরভিটা প্লাবিত হওয়ায় পাশাপাশি ভারীবর্ষণের কারণে বেশির ভাগ পরিবারে রান্নার চুলা জ্বালানো যায়নি। ফলে সবকিছু থাকার পরও পরিবারগুলোতে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার দিনভর উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে বিভিন্ন গ্রামের দূর্গত মানুষের মধ্যে জরুরীখাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
জাহানপুরের তুলাগাছিয়া, যমুনা আবাসন, কবি মুজাম্মেল হক আবাসন, শের ই বাংলা আবাসন, বেগম রোকেয়া আবাসন , শুরভী গুচ্চগ্রাম, কর্নফুলি গুচ্চগ্রাম, আটকপাট কবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত গুচ্ছগ্রাম, চরমানিকা মাহবুবা আবাসনসহ বেড়িবাধেঁর ঢালের ৫ শতাধিক পরিবারের মধ্যে জরুরী শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত খাদ্য বিতরণ অব্যহত আছে ।
শুকনো খাবার বিতরণ কালে উপজেলা নির্বাহী অফিসর নওরীন হক দূর্গতদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, প্রত্যেক দূর্গত মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌছে দেয়া হবে। একজন দূর্গত মানুষ ক্ষুদার্ত থাকাকালে আমি ঘরে ফিরছি না। দূর্গত কোন মানুষ না খেয়ে থাকবে না। সকলের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য সরকারের তরফ থেকে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকারের এই প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ঘুর্ণিঝড় রেমালরে তান্ডবে চরফ্যাশন উপজেলায় প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ৬ হাজার বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। তারমধ্যে ৩ হাজার ঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। আর বাকি ২ হাজার ঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিয়ে মৎস্য,ও কৃষি অফিস সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে তালিকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের সঠিক তালিকা পাওয়া গেলে সঠিক পরিমান জানা যাবে।
লালমোহননিউজ/ -এইচপি