হাসান লিটন, চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরমানিকা ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ চরমানিকা গ্রামের মৃত রহমান হাওলাদারের স্ত্রী আবেদা খাতুন (৫৪), তিনি প্রায় ১২ বছর যাবত বিধবা। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই ভিক্ষায় চলে তার সংসার। আবেদা খাতুন বাউফাল উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামের জয়নাল খলিফার মেয়ে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (২৯ আগষ্ট) সকালে গিয়ে দেখা যায়, একটি ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করেন আবেদা খাতুন, অভাবের কারণে নিজের এবং প্রতিবন্ধী মেয়ের মুখে ভাল কিছু খাবার তুলে দিতে পাড়েন না। ফলে গরীব বিধবা এই মা চরম দুচিন্তায় পাড় করছেন বছরের পর বছর। এ যেন দেখার কেউ নেই।
আবেদা খাতুনের একটি ভাঙ্গা ঘর ছাড়া আর কোনো জায়গা জমি নেই। ভূমিহীন ও গৃহহীন দুটোই তিনি। তার দুই ছেলে মেয়ে। ছেলে ছালেম হাওলাদার (২২), মেয়ে প্রতিবন্ধী মমতাজ বেগম (৩৪)। ছেলে কোনো ধরনের ইনকাম করতে পারলেও সে বাড়িতে আসে না। এমনকি মা-বোনেরপ খোঁজ খবর রাখেন না। আর মেয়েটা প্রতিবন্ধী শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অচল, অক্ষম।
তাকে নিয়েই বিধবা আবেদা খাতুন চরমানিকা ৩ নম্বর ওয়ার্ড বেড়িবাঁধের ঢালে একটি ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করেন। তাও ঘরের চালের উপর টিন না থাকায় ঘরের মধ্যে পরে পানি, এই পানিতে মা-মেয়ের বসবাস। তাদের নাই আয়-ইনকাম। তাই ভিক্ষায় চলে তাদের সংসার, অনেক সময় ভিক্ষা না করতে পারলে, না খেয়ে দিনযাপন পার করতে হয়।
বিধবা আবেদা খাতুনের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, স্বামীর মৃত্যুর পরে ১২ বছর বেড়িবাঁধের ঢালে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করি। আমার মানসিক,শারীরিক প্রতিবন্ধী একটি মেয়ে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি। খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন পার করতে হয়। ঘরে বসে থাকতে থাকতে চিকন হয়ে পঙ্গুত্ব হওয়ার পথে আমরা মা-মেয়ে। কোন প্রকার কাজ করতে পারছি না। এসময় তিনি কান্না কন্ঠে আরো বলেন, কেউ যদি আমাকে দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা এবং একটি বসতঘরের ব্যবস্থা করে দেন আমি তাকে মন ভরে আল্লাহর কাছে দোয়া করবো।
চরমানিকা ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ফারুক মিয়া ও স্থানীয় এছাক হাওলাদার সহ অনেকে জানান, বিধবা জাবেদা খাতুনের জন্য একটা গৃহের খুবই প্রয়োজন। স্থায়ী একটি আবাসনের ব্যবস্থা হলে শেষ সময়টা অন্তত একটু শান্তি পেতো। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বিধবা জাবেদা খাতুনের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে এমনটাই দাবী তাদের।
চরফ্যাশন উপজেলা সমাজবেসা কর্মকর্তা মো. মামুন হোসাইন জানান, ওই বিধবা নারী আবেদা খাতুন এবং তার প্রতিবন্ধী মেয়ে মমতাজ বেগম উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে এসে আবেদন করলে তাদেরকে ভাতার আওতায় আনা হবে।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক জানান, নতুন করে এ উপজেলায় কোনো ঘর বরাদ্দ হয়নি, পরবর্তীতে যদি বরাদ্দ হয় তাহলে বিধবা জাবেদা খাতুনের আবেদনের ভীতিতে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
লালমোহননিউজ/ -এইচপি