জন্মের আগেই এতিম হয়ে গেল মেয়ে

জন্মের আগেই এতিম হয়ে গেল মেয়ে
স্বজনদের আহাজারি

স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কয়েকদিন আগেই জানতে পারেন অনাগত শিশুটি মেয়ে হবে। মেয়ের বাবা হবেন এমন সুখবরে অনেক খুশি হয়েছিলেন জাহিদ হাসান। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডই সেই আনন্দ ম্লান হয়ে গেল একটি সড়ক দুর্ঘটনায়।

বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার সময় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটবাউর এলাকায় বাসের ধাক্কায় লেগুনা খাদে পড়ে লেগুনাচালক জাহিদ নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত হন আরো তিন লেগুনাযাত্রী।


নিহত মো. জাহিদ হাসান সদর উপজেলার ভাটবাউর এলাকার মোতালেবের ছেলে। সাত বছর আগে চর গড়পাড়া গ্রামের সামিরার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি দুই ছেলে সন্তানের বাবা ছিলেন। লেগুনা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জাহিদ তিন ভাইবোনের মধ্যে বড়।


দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিহত জাহিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সামিরা তার ঘরের খাটের এক কোনে দুই ছেলে আব্দুল্লাহ ও আমানুল্লাহকে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। একটু পরপর প্রলাপ করে মূর্ছা যাচ্ছেন। আর বলছেন- আমার মেয়ে হওয়ার খবরে ওদের বাবা খুব খুশি হয়েছিল। অনাগত সন্তানের মুখ আর দেখা হলো না। আমার মেয়ে জন্মের আগেই এতিম হয়ে গেল। কারো কোনো সান্ত্বনাই কাজে আসছে না।

নিহত জাহিদের প্রতিবেশী চাচা লুৎফর রহমান লেবু বলেন, আমি ডায়াবেটিস রোগী। প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হই। আমরা কয়েকজন রাস্তার বিপরীত পাশেই ছিলাম। জাহিদ লেগুনা থামিয়ে যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছিল। হঠাৎ করেই পেছন থেকে একটি বাস জাহিদের লেগুনায় ধাক্কা দিলে যাত্রীসহ পাশের খাদে পড়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পানিতে পড়ে ডুবে যায় লেগুনাটি। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা এসে লাশ উদ্ধার করে।


জাহিদের ফুফু বলেন, জাহিদের মেয়ের খুব শখ ছিল। দুই ছেলের পর মেয়ে হবে জেনে খুব খুশি হয়েছিল জাহিদ। মেয়ের মুখটা দেখে যেতে পারলো না। ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা, আরো একটা মেয়ে হলে কীভাবে মানুষ করবো তাদের মা।


এ ঘটনায় অপর নিহতরা হলেন- মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পাথরাইল কুড়িপাড়া গ্রামের মহাদেব চন্দ্র, বাগজান গ্রামের হেনা আক্তার ও মালেকা বেগম।  


মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কাজী একেএম রাসেল জানান, এ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন ঘিওর উপজেলার তরা এলাকার নাসির হোসেন ও সদর উপজেলার আটিগ্রাম এলাকার মুসা নামে দুই যাত্রী। গুরুতর আহত অবস্থায় মুসাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর নাসির জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


গোলড়া হাইওয়ে থানার ওসি সুখেন্দু বসু জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভাটবাউর এলাকায় লেগুনাচালক এক যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া নেয়ার জন্য গাড়িটি থামান। এ সময় সময় পেছন থেকে একটি বাস লেগুনাটিকে ধাক্কা দিলে পাশের খাদে পড়ে পানিতে ডুবে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। আহত হন আরো দুইজন। ঐ বাসটি উদ্ধার করা হলেও এর চালক পলাতক রয়েছেন। দ্রুত তাকে গ্রেফতার করা হবে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

লালমোহননিউজ/-জেডি