আন্তরিকতার টানে কর্মচারীর বাড়িতে ছুটে এলেন সৌদির দুই ভাই

সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় মক্কা নগরীর বাসিন্দা ফয়সাল হাজ্জাজি ও তার ভাই মানসুর হাজ্জাজির বাড়িতে কাজ করতেন সুমন আহমেদ। এক যুগ আগে সৌদি থেকে দেশে ফেরেন তিনি।
সৌদির বাসিন্দা ফয়সাল হাজ্জাজি ও তার ভাই মানসুর হাজ্জাজি সুমনের সঙ্গে কখনো কর্মচারীর মতো আচরণ করেননি। বন্ধুর মতো ভাবতেন। সেই ভালোবাসা থেকে সম্প্রতি সুমনের বাড়িতে আসেন সৌদি আরববাসী দুই ভাই। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানও ঘুরে দেখেন তারা।
২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুমন ফয়সাল হাজ্জাজির বাড়িতে কর্মরত ছিলেন। ফয়সাল হাজ্জাজি পুলিশের সাবেক অফিসার আর ছোট ভাই মানসুর হাজ্জাজি মক্কা নগরীর কিং আবদুল আজিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক।
সুমনের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার মলমল গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল হাই। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামের জৈনা বাজারে থাকেন।
জানা যায়, গত সোমবার সৌদি আরবের সহোদর ভাই পাঁচদিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন সুমনের বাড়িতে। আগামীকাল শনিবার সৌদি আরব ফিরে যাবেন তারা।
সুমন আহমেদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সৌদি আরবের দুই ভাই সুমনের সঙ্গে গাড়িতে করে বাড়িতে পৌঁছেছেন। তারা দুই শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে আদর করছেন। তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের মিঠাই এনেছেন। এগুলো দেওয়া-নেয়ার আনন্দে মেতেছেন দুই ভাই। ঘরের মেঝেতে বসে গল্প করছেন নিজের বাড়ির মতো। আরবি ভাষায় কথোপকথন করছেন সুমনের সঙ্গে।
সুমন আহমেদ বলেন, সৌদি আরবে থাকাকালীন তাদের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা কখনো আমাকে কর্মচারী মনে করতেন না। আমাকে তাদের পরিবারের একজন সদস্য মনে করতেন। সৌদি আরবে তাদের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে মালিকদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের সঙ্গে ছিল আমার বন্ধুর মতো সম্পর্ক।
আবেগে আপ্লুত হয়ে সুমন আহমেদ বলেন, ভালোবাসার টানে এক যুগ পর বাংলাদেশে এসেছেন তারা। আমি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের নিয়ে আসি। এরপর গাড়ি নিয়ে চলে যাই কক্সবাজারের টেকনাফে। সেখানে ঘুরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জৈনা বাজার বাসায় এসেছেন। শুক্রবার আমার গ্রামের বাড়ি বেড়ানো শেষে আগামীকাল শনিবার দেশে ফিরে যাবেন তারা।
সুমন আহমেদ আরো বলেন, সুদূর সৌদি আরব থেকে আমাকে ভালোবেসে তাদের আগমন। আমাকে এবং আমার পরিবারকে অনেক আনন্দ দিয়েছে। আর বিশ্বাস দিয়ে সবকিছু সম্ভব-এটা প্রমাণিত হয়েছে।
সৌদি আরবের নাগরিক ফয়সাল হাজ্জাজি বলেন, বাংলাদেশে এসে আমরা খুবই আনন্দ পেয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ খুবই ভালো। তাদের চলাচল একদম সহজ-সরল। ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে অনেক মানুষ নামাজ আদায় করছে। এগুলো আমাদের আনন্দ দিয়েছে অনেক।
ছোট ভাই মানসুর হাজ্জাজি বলেন, সুমন আহমেদের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক। এ সম্পর্কের কারণে তাকে দেখতে বেড়াতে তার দেশে চলে এলাম। অনেক দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা হয়েছে। গাজীপুর খুবই সুন্দর জেলা। হয়তো আবার বাংলাদেশে আসব বেশি সময় নিয়ে। সুমন আহমেদ আমাদের বাড়িতে দীর্ঘদিন থেকেছেন। তার কার্যকলাপ আমাদের অনেক ভালো লেগেছে। তার প্রতি বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। তাকে সব সময় আমরা পরিবারের সদস্য মনে করতাম। আর এখনো করি। তাই এত ভালোবাসা তার প্রতি।
জৈনা বাজারের এক ব্যবসায়ী মো. মাসুদ রানা বলেন, সৌদি আরবের দুই ভাই বেড়াতে এসে বাজার ঘুরে দেখেছেন। আমাদের সঙ্গে কুশল বিনিয়ম করছেন। স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায় করছেন। তারা খুবই ভালোভাবে সবার সঙ্গে মিলেমিশে সময় পার করছেন।
লালমোহননিউজ/- জেডি