‘ভাই-বোন-ভাগ্নিকে হারিয়ে রুবেলের গগন বিদারী আর্তনাদ

ঝালকাঠিতে বাস দুর্ঘটনায় নিহত-১৭

‘ভাই-বোন-ভাগ্নিকে হারিয়ে রুবেলের গগন বিদারী আর্তনাদ
ছবি: সংগৃহীত

আইরিন আক্তার শ্বশুরবাড়ি বরিশাল থেকে বাবার বাড়ি ঝালকাঠিতে বেড়াতে এসেছিলেন। ছুটি কাটিয়ে বাবার বাড়ি থেকে দুই বছরের মেয়ে রিপাকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় আইরিন আক্তারের ভাই নয়ন (১৬) বোন এবং ভাগনিকে বরিশালের লঞ্চে তুলে দিতে যান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা তিনজন রাজাপুর থেকে বরিশালগামী বাশার স্মৃতি বাসটিতে ওঠেন।

এর কিছুক্ষণ পর দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আইরিন ও নয়নের বড় ভাই রুবেল ছুটে যান দুর্ঘটনাস্থল ছত্রকন্দায়। তাদের না পেয়ে আইরিনের মোবাইলে ফোন দেন। ফোনটি বন্ধ পান তিনি। এরপর ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন। সেখানেই তিনজনের লাশ খুঁজে পান নিহত ১৭ জনের মধ্যে। ভাই, বোন এবং ভাগনির লাশ দেখার পর রুবেলের গগন বিদারী আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ।

কান্নারত অবস্থায় রুবেল বলেন, ‌‘এইটাই তোগোর শ্যাষ বিদায় বুঝলে যাইতে দিতাম না। এ কি হইলো রে।’ পাশেই তার আরেক ভাই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘আইরিনকে লঞ্চে তুলে দিয়ে ফিরে আসার কথা ছিল ছোট ভাই নয়নের। দুই বছর বয়সী রিপামনি খুব দুষ্ট। আমার বোন তাকে একা সামলাতে পারছিলো না বলে নয়নও পৌঁছে দেওয়ার জন্য যায়। এরমধ্যে শুনি বাস অ্যাকসিডেন্ট করছে। মনে তহন কামড় দিছে। পরে খোঁজ লইয়া দেহি মোর ভাই-বুইন-ভাগনি যে বাসে তুইল্লা দিছি হেইডাই পড়ছে। দৌড়াইয়া গিয়ে দেহি বাসের মধ্য থেকে খালি লাশ উডায়। আমি বুঝছিলাম ভাই-বুইন-ভাগনিরে আল্লাহ বাঁচাইছে। কিন্তু না আগেই হ্যাগোরে লইয়্যা গ্যাছে। এহন মোর মায়েরে কি জবাব দিমু।’

ঝালকাঠির ছত্রকান্দা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী বাস পুকুরে পড়ে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। শনিবার সকাল ৯টার দিকে ঝালকাঠির ছত্রকান্দা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, সকালে ভান্ডারিয়া থেকে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে বরিশালের দিকে যাচ্ছিল বাসটি। পথে ঐ এলাকায় পৌঁছালে ইউপি ভবনের সামনের মোড় ঘুরতেই একটি অটোরিকশাকে সাইড দিতে গিয়ে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে যায়। স্থানীয়রা উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। এর মধ্যে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ১৫ জনের লাশ উদ্ধার করে। এরমধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি।

পরে জেলা পুলিশের উদ্ধারযন্ত্র ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসটি উদ্ধার করে। এ সময় বাসের ভেতর থেকে আরো দুইজনের লাস উদ্ধার হয়। এতে মোট নিহত হন ১৭ জন। এছাড়া আহত ২৩ জনকে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ দুর্ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম।

লালমোহননিউজ/ -এইচপি