ঘুম ভাঙার পর দেখেন ঘরের চালা নেই!

ঘুম ভাঙার পর দেখেন ঘরের চালা নেই!
লালমোহনের অন্নদা প্রসাদ এলাকায় আকস্মিক টর্নেডোতে ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘর।  ছবি: লালমোহন নিউজ

গভীর রাত। ঘুমে মগ্ন সবাই। হঠাৎই বিকট শব্দ। ওই শব্দে ভেঙে যায় সকলের ঘুম। সজাগ হয়ে দেখেন পুরো ঘরের চালা নেই। এমন দৃশ্য এক পরিবারের। অন্য আরেকটি পরিবারেরও সবাই ছিলেন ঘুমে। হঠাৎ করেই খুঁটি ভেঙে হেলে পড়ে ঘর। ঘুমের মধ্যে গিয়ে পড়েন লাকড়ির মাচার নিচে। এতে ঘুম ভাঙে সকলের। পরে চিৎকার দিলে পার্শ্ববর্তী ঘরের লোকজন তাদের মাচার নিচ থেকে উদ্ধার করেন। এতে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যান সকলে।

এমন করেই আকস্মিক টর্নেডোর আঘাতের বর্ণনা দিয়েছেন ভোলার লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্নদা প্রসাদ এলাকার এলাকার সুধীর চন্দ্র লস্কর এবং রমনী মোহন দাস। গত রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে মাত্র পাঁচ মিনিট তাণ্ডব চালায় শক্তিশালী টর্নেডোটি। এতে ওই এলাকায় প্রায় ৭টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

সুধীর চন্দ্র লস্কর জানান, রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে হঠাৎই আমাদের বাড়িতে আঘাত হানে টর্নেডো। রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। ওই টর্নেডোর আঘাতে ঘরের চালা উড়ে যাওয়ার বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। তখন ঘরে আমি আর মেয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে সজাগ হয়ে দেখি ঘরের চালা উড়ে গিয়ে তছনছ হয়ে পড়ে আছে। ওই ঘটনার তিনদিন পার হয়েছে। তবে এখনো ঘর মেরামত করতে পারিনি। বৃষ্টি না হলে এই ভাঙা ঘরেই থাকি। আর যদি বৃষ্টি হয় তাহলে অন্যের ঘরে আশ্রয় নিই। ঘরটি মেরামত করা এখন খুব জরুরি। তাই সরকারি সহযোগিতা কামনা করছি।

টর্নেডোর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত রমনী মোহন দাস বলেন, গত রোববার রাতে ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ প্রচন্ড বাতাসে খুঁটি ভেঙে ঘরটি হেলে পড়ে যায়। শোয়ার চৌকি থেকে বৃদ্ধ স্ত্রীসহ গিয়ে পড়ি লাকড়ির মাচার নিচে। এরপর ঘুম ভাঙে। তখন চিৎকার দিলে পাশের ঘরের লোকজন এসে আমাদের উদ্ধার করেন। এজন্য প্রাণে বেঁচে গেছি। টর্নেডো চলে গেছে, তবে ঘরটি এখনো মেরামত করতে পারিনি।

কিভাবেই বা মেরামত করবো? আমি এবং স্ত্রী দুইজনেই অসুস্থ্য-বৃদ্ধ। তবে আমার শরীরিটা একটু বেশিই খারাপ। এজন্য নিজে কোনো কাজ করতে পারি না, ঘরেই থাকি। আমার স্ত্রী অসুস্থ্য শরীর নিয়েও  মানুষের কাজ করেন। কাজের বিনিময়ে তার সামান্য আয় হয়। তা দিয়েই কোনো রকমে দুইজনে চলছি। তাই সরকারি সহযোগিতা না পেলে জরাজীর্ণ ঘরটি আর কোনোভাবে মেরামত করতে পারবো না। এজন্য ঘরটি মেরামতের জন্য আমি সরকারের কাছে সহযোগিতার অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহাগ ঘোষ জানান, ওইদিন রাতে আকস্মিক টর্নেডোর আঘাতে অন্নদা প্রসাদ এলাকার প্রায় ৭টি বসতঘরের ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতি করেছি। ওই তালিকাটি খুব শিগগিরই জেলায় পাঠাবো। সেখান থেকে বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হবে।