মনপুরায় জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বকনা বাছুর বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম

 ২৮ হাজারের স্থলে জেলেরা পেলেন ২০ হাজার টাকা

মনপুরায় জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বকনা বাছুর বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম
ছবি: লালমোহন নিউজ

সীমান্ত হেলাল, মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি: ভোলার মনপুরায় জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বকনা গরু বাছুর বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা সময়ে ৫০ জেলে পরিবারের মাঝে প্রনোদনা হিসেবে মৎস্য বিভাগের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যাবস্থাপনা প্রকল্পের আওয়তায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশের  প্রজনন, বেড়ে ওঠা ও উৎপাদন বাড়াতে এসব বকনা গরু বাছুর বিনামূল্যে বিতরন করা হয়। এতে জেলে পরিবারকে গরু কেনার জন্য ২৮ হাজার টাকা দেয়ার কথা থাকলেও ২০ হাজার টাকা হাতে পাওয়ার অভিযোগ করেছেন জেলেরা। 

এদিকে বকনা গরু বাছুর কিনতে জেলেদের খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সেই গরু অনেক দুর দুরান্ত থেকে অফিসে এসে ২০ হাজার টাকা গ্রহন করতে ও ছবি তুলতে হয়েছে জেলেদের। আনা নেওয়া খরচ বাবদ ৩ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা থাকলেও সেই টাকা এখনো হাতে পায়নি জেলেরা। গরু প্রতি ১০/১৫ হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হয়েছে জেলেদের।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে মোট তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা হলো ১৪ হাজার ৪শ’ ৪৮ জন । প্রতিটি জেলে পরিবারকে প্রণোদনা হিসেবে মৎস্য বিভাগ জেলেদের মাঝে বিনামূল্যে গরুর বকনা বাছুর বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। এ উদ্যোগের আওতায় মনপুরায় প্রথম পর্যায়ে ৫০ জেলেকে একটি করে গরু বাছুর দিয়েছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মনপুরা উপজেলায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বকনা বাছুর ক্রয় বাবদ সরকারি বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার টাকা। জেলেদের গরু বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম পাওয়া গেছে। এতে ৫০টি বাছুরের বিপরীতে ২৮ হাজার টাকা করে ১৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। উপজেলায় ৫০ জন জেলে বকনা বাছুর পেয়েছেন।  প্রতিটি বাছুর ক্রয় ও আনুষাঙ্গিক মিলিয়ে ২০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে বলে জানা গেছে । বাকি ৮ হাজার টাকা ভ্যাট ও টেক্স বাবদ খরছ হয়েছে বলে জানান উপজেলা মৎস্য অফিসের এক কর্মকর্তা । 

উপকারভোগী  জেলে সুমন, ইব্রাহিম, নবী মাঝি, হারুন ব্যাপারী বলেন, আমরা সরকারের দেয়া বকনা গরু বাছুর পেয়েছি। আমাদেরকে বলা হয়েছে ২০ হাজার টাকার মধ্যে গরু কেনার জন্য। বিশ হাজার টাকা দিয়ে এখন গরু পাওয়া যায় না । তাই আমরা আমাদের থেকে ১০/১৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে ৩০/৩৫ হাজার টাকার মধ্যে গরু কিনেছি। সেই গরু হাজিরহাট ইউএনও স্যারের অফিসের সামনে নিয়েছি।  সেখান থেকে ছবি তুলে ও ২০ হাজার টাকা নিয়ে আবার চলে এসেছি । তবে গরু নিজেরা কিনে নিয়েছি । মৎস্য অফিস থেকে ২০ হাজার টাকা আমাদেরকে দিয়েছে । 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুবিধাভূগি বলেন, শুনেছি সরকার একটি গরুর জন্য ২৮ হাজার টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে। তবে মৎস্য অফিস আমাদের কে ২০ হাজার টাকা দিয়েছে । আমাদের থেকে কিছু টাকা দিয়ে একটু ভালো গরু কিনেছি। মৎস্য অফিসে গরু নিতে আমাদের খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকার বেশি। সেই খরচের টাকা অফিস দিবে বলছে কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই টাকা হাতে পাইনি । 

এদিকে বকনা গরু বাছুর বিতরনের তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়নের অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে জেলেদের নাম বাছাই করার অভিযোগ উঠেছে খোদ প্রকল্পের মাঠ সহকারি মোঃ নাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে।

এব্যাপারে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যাবস্থাপনা প্রকল্পের মাঠ সহকারি মোঃ নাজিউর রহমান (মুন) বলেন, সকল অনিয়ম ও অভিযোগের ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভালো জানেন। আমি শুধু গরু বিতরনে সহযোগিতা করেছি। তাছাড়া গরু ক্রয় ও এর আনুষাঙ্গিক খরচের জন্য মৎস্য বিভাগ থেকে স্থানীয়ভাবে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। আর যারা গুরু বাছুর পাননি, তারাই এসব অভিযোগ করছে। তবে স্থানীয় ঠিকাদারের নাম ও মোবাইল নাম্বার দিতে অনিহা প্রকাশ করেছেন তিনি । 

উপজেলা হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসেহাট গ্রামের বাসিন্দা লাইজু বেগম বলেন, আমার স্বামী গত ১ বছর আগে নদীতে পরে মারা গেছেন । এতে আমার সংসার চলছে খুব কষ্টের মাঝে। সেই দিক বিবেচনা করে মৎস্য অফিস থেকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছে । পাশের ১ জন থেকে বিশ হাজার টাকা ধার করে ৩৪ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাচুর গরু কিনেছি। সেই গরু উপজেলা নিতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে।

ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কে গরু কিনার জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। অবশিষ্ট ৮ হাজার করে ৫০ নামে ৪ লক্ষ টাকাই মৎস্য কর্মকর্তা ও অফিস সংশ্লিষ্টদের পকেটে চলে গেছে।

এব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের নিয়ম ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত জেলেদেরকেই (যাদের জেলে কার্ড আছে) বকনা গরু বাছুর দেওয়া হয়েছে। সরকারি নিয়মানুসারে সব কাজ করেছি। এখানে কোন অনিয়ম হয়নাই।

এব্যাপারে উপজেলার নির্বাহি অফিসার মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, বকনা গরু বাছুর বিতরনে অনিয়মের অভিযোগ আপনাদের কাছ থেকে জেনেছি। দ্রুত প্রয়োজনিয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

লালমোহননিউজ/ -এইচপি