ভোলায় সিভিল সার্জন হলেন দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তানহা
অন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে ভোলায় এক ঘণ্টার জন্য প্রতীকী সিভিল সার্জনের দায়িত্ব নিলেন ভোলা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী হুমায়রা তানহা। সোমবার দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত ভোলার সিভিল সার্জন হিসেবে তিনি এই প্রতীকী দায়িত্ব পালন করেন।
এ সময় ভোলার সিভিল সার্জন ডা. কেএম শফিকুজ্জামান প্রতীকী দায়িত্ব হিসেবে তাকে ধারণা দেন। এ সময় হুমায়রা তানহাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের পাশের চেয়ারে বসতে দেন সিভিল সার্জন। দায়িত্ব পেয়ে অনুপ্রাণিত দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী তানহা। ভবিষ্যতের লক্ষ্যও তুলে ধরেন তিনি।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর ‘গার্লস টেকওভার’ কর্মসূচির আওতায় ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) সহযোগিতায় ইয়েস বাংলাদেশ ও ইয়ুথ ফর চেঞ্জ-এর আয়োজনে ‘গার্লস টেকওভার’ শীর্ষক কর্মসূচিতে কন্যা শিশু যুব নারীকে নেতৃত্ব উদ্বুদ্ধকরণ মেয়েদের আত্মবিশ্বাস তৈরির সুযোগ বৃদ্ধির কর্মসূচির আওতায় এক ঘণ্টার জন্য প্রতীকী সিভিল সার্জন দায়িত্ব পালন করা হয়।
প্রতীকী সিভিল সার্জনের দায়িত্ব নিয়ে হুমায়ারা তানহা বলেন, আজ ভোলার সিভিল সার্জনের প্রতীকী দায়িত্ব পালন করতে পেরে অসাধারণ ভালো লাগছে। আজকের এই দিনটির জন্য অনেক অপেক্ষায় ছিলাম। আজকের এই দিনটির জন্য গত ৫ দিন যাবৎ এই পেশা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আজ যখন এই আসনটিতে বসেছি তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি আমার মতো কিশোর কিশোরীরা এমন পর্যায় পৌছাতে পারবে।
তানহা বলেন, আমি স্বপ্ন দেখছি, আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে ভবিষ্যতে নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ পাবে নিজেদের স্বপ্নগুলো পূরণ করার জন্য। যেমন আজকে আমি আত্মবিশ্বাসী হয়েছি এক ঘণ্টা সিভিল সার্জন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে।
এ সময় তিনি ভোলার স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য একাধিক সুপারিশ করেন। যার মধ্যে অন্যতম ভোলায় একটি শিশু হাসপাতাল তৈরি, পাশাপাশি ভোলার ২২ লাখ জনসংখ্যার জন্য একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার পাশাপাশি জেলার হাসপাতাল গুলোতে ডাক্তার, নার্সসহ জনবল বৃদ্ধির সুপারিশ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ কিশোর-কিশোরী। এই মোট কিশোর-কিশোরীর ৪৮ শতাংশ কিশোরী এবং ৫৩ শতাংশ কিশোর। কিন্তু এই কিশোর কিশোরীদের জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র কিংবা হাসপাতালে সেবা নেয়ার জন্য আলাদা ব্যবস্থার সেবার মান বৃদ্ধি করার কথা বলেন।
সিভিল সার্জন ডা. কে, এম শফিকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের নারীরা আজ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের সরকার প্রধান নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকারও একজন নারী, ডা. নারী, সিভিল সার্জন নারী, নার্স নারী। সে ক্ষেত্রে প্রান্তিক গ্রামে বা দ্বীপ অঞ্চলের নারী ও কিশোরীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কলেজ শিক্ষার্থী হুমায়ারা তানহা ওই কিশোরীদের আইকন হিসেবে পরিচিতি পাবে। তাকে দেখেই শিশু ও কিশোরী মুক্তমনা হিসেবে বেড়ে উঠবে। দেশের সর্বোচ্চ পদগুলো অর্জনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেওয়া সাহস যোগাবে। নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, তানহা আজ যে সুপারিশ করেছে তা ভোলার স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এ সময় ভোলা সিভিল সার্জন অফিস মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ফাহমিদ খান, ভোলা সদর হাসপাতাল সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজমা বেগম, ন্যাশনাল চিলড্রেন’স্ টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) এর ভলান্টিয়ার রিমা আক্তার শিমু, মো. শাফায়েত হোসেন সিয়াম, হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, সাংবাদিক ও এনসিটিএফ বাংলাদেশ এর ভোলা জেলা কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা উপস্থিত ছিলেন।
হুমায়রা তানহা ভোলা সরকারি দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ভোলা পৌরসভা ৩ নম্বর ওয়ার্ড কালি বাড়ি রোড এলাকার মো. হুমায়ুন কবিরের কন্যা। তানহা ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্ক ফোর্স (এনসিটিএফ)ভোলা জেলা কমিটির সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিশু কিশোরদের প্রতীকী দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে তাদের নেতৃত্বের গুণাবলী তৈরি হবে বলে মনে করেন জেলার সচেতন নাগরিক সমাজ।
লালমোহননিউজ/ -এইচপি