বোরহানউদ্দিনে এইচপিভি টিকা নিয়ে অসুস্থ অর্ধশত ছাত্রী

জে.এম.মমিন, প্রতিনিধি, বোরহানউদ্দিন (ভোলা): ভোলার বোরহানউদ্দিনের জ্ঞানদা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে জরায়ু মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ টিকা প্রয়োগের পর প্রায় অর্ধশত ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে উদ্ধার করে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বেলা ১১ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ভোলা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজাদ জাহান আহত ছাত্রীদেরকে দেখতে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। জানা গেছে, জরায়ু মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে মঙ্গলবার সকালে ওই স্কুলের প্রায় ১৬২ জন ছাত্রীকে বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়। ছাত্রীদের শরীরে টিকা প্রয়োগ করার কয়েক মিনিটের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে পড়েন। এরপর শিক্ষক ও পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর একের পর এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারো হাত-পা জ্বালাপোড়া করে, কেউ বমি করে, কারো মাথা ব্যথা করছে, কেউ মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। আহত শিক্ষার্থীরা ৫ম, ৬ষ্ট, ৭ম এবং ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
ভোলা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজাদ জাহান বলেন, শিশুরা মূলত মাস সাইকোলজিক্যাল ইলনেসে আক্রান্ত হয়েছে। এটি তেমন গুরুতর কোনো রোগ না। তিনি আরো বলেন, জ্ঞানদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৮টা থেকে ১৬২ জন শিক্ষার্থীকে এইচপিভি টিকা দেয়া হয়। এর মধ্যে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে হঠাৎ করে এক ছাত্রী মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যায়। এরপরে একের পর এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৬০ থেকে ৬৫ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে।
এরমধ্যে কয়েকজনকে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখানে এমন শিক্ষার্থীও অসুস্থ হয়ে পড়েছে যাদের শরীরে টিকা প্রয়োগ করা হয়নি। সুতরাং সেজন্য আমরা বলছি এটি মাস সাইকোলজিক্যাল ইলনেস রোগ। এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমরা বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক রেখেছি। ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী বাড়িতে ফিরে গেছে। ঘটনার পর আপাতত ওই স্কুলে টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ, ভোলায় ১ লাখ ২১ হাজার ৫৮০ জন কিশোরীকে প্রথমবারের মতো বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা প্রদান করা হবে। এ কর্মসূচিতে সহযোগিতা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশে নারীদের স্তন ক্যান্সারের পরে ২য় সর্বোচ্চ জরায়ুমুখ ক্যান্সার।
বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পযর্ন্ত প্রাথমিকভাবে ‘৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছাত্রী’ এবং ‘১০ থেকে ১৪’ বছর বয়সী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত মোট ১ লাখ ২১ হাজার ৫৮০ কিশোরীকে বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা প্রদান করা হবে।
এর মধ্যে ভোলার ৭ উপজেলায় ৫২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬১৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ১৮ কর্ম দিবসের টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তার মধ্যে প্রথম ১০ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থায়ী কেন্দ্র সমূহে এবং পরবর্তী আট কর্ম দিবসের নিয়মিত ইপিআই স্থায়ী এবং অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। এই ক্যাম্পেইন থেকে টিকা পেতে ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। এছাড়াও নিবন্ধনে ব্যর্থ শিক্ষার্থীরা জন্মনিবন্ধনের সনদ নিয়ে টিকা কেন্দ্রে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে টিকা নিতে পারবে।
লালমোহননিউজ/ -এইচপি