৯ ওয়ার্ডের ৮টিই নদী গর্ভে বিলীন
তজুমদ্দিনের বড় মলংচড়া ইউনিয়ন
এম. নয়ন, প্রতিনিধি, তজুমদ্দিন (ভোলা): ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার বড় মলংচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ২১ বছর ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি। সর্বশেষ ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন মো. নূরনবী সিকদার। সিমানা বিরোধসহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে গত ২১ বছর ধরে তিনিই চেয়ারম্যান পদে বহাল রয়েছেন। যদিও বর্তমানে ইউনিয়নটির একটি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ৮টি ওয়ার্ডের কোনো অস্তিত্ব নেই। মেঘনা নদীর ভাঙনে ৮টি ওয়ার্ড পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। এখন একটি ওয়ার্ড নিয়েই চলছে পুরো ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম।
অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদের নেই নিজস্ব কোনো ভবনও। বর্তমানে পরিষদের কার্যক্রম চলে একটি টিনশেড ঘরে। যা ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়। বর্তমানে বড় মলংচড়া ইউনিয়নে ভোটার রয়েছেন ৫ হাজার ২০০জন। যারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসবাস করছেন। এমনকি বড় মলংচড়া ইউপি চেয়ারম্যান নিজেও পার্শ্ববর্তী বোরহানউদ্দিন উপজেলায় বসবাস করছেন।
স্থানীয়দের দাবি, চেয়ারম্যান নূরনবী সিকদার ইচ্ছাকৃতভাবে নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য পাশর্^বর্তী ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে সিমানা বিরোধের মামলা দিয়ে নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছেন। যদিও যে সকল ইউনিয়নের সঙ্গে সিমানা বিরোধের মামলা হয়েছে সম্প্রতি সে সকল ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপরও মামলার মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। এছাড়া দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান থাকায় নূরনবী সিকদার নিজের ইচ্ছামতো পরিষদ চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, বড় মলংচড়া ইউনিয়নটির বড় একটি অংশ মেঘনা নদীর মাঝে অবস্থিত। ৮০-এর দশকে মেঘনা নদীর ভাঙনে মলংচড়া ইউনিয়নটির ওইসব অংশ বিলীন হয়ে যায়। তখন সেখানকার বাসিন্দাদের একটি অংশ পার্শ্ববর্তী চর জহিরউদ্দিন সংলগ্ন সিডার চরে বসতি শুরু করেন। সে থেকে ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড তজুমদ্দিনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে থাকলেও বাকি ৮টি ওয়ার্ড মেঘনা নদীর মাঝে ছিল। মেঘনা নদীর মাঝের এ ৮টি ওয়ার্ড গত প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর আগে মেঘনা নদীর ভাঙনে পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়। এর পর সেখানের বাসিন্দারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন।
সম্প্রতি গত তিন বছর আগে মেঘনা নদীর মাঝে বড় মলংচড়া ইউনিয়নের পূর্বের চরটি আবারো জেঁগে উঠলে চেয়ারম্যান সেখানে নিজের নামে বাজার ও মাছঘাট তৈরি করেন এবং চরটি নাম রাখেন চর রাইয়ান চৌধুরী। চরের জমি মহিষ মালিকদের কাছে লিজ দেওয়া শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে ইউনিয়নের অন্যান্য লোকজনও সেখানে যাওয়া-আসা শুরু করেন। ২০২৩ সালের দিকে সেখানে হুজুরের খাল নামে আরো একটি মাছঘাট এবং বাজার তৈরি করা হয়। সেখানেও লোকজন বসবাসের জন্য নিজেদের খরচে ঘর তৈরি করেন। বর্তমানে ওই চরে শতাধিক টিনের ঘর রয়েছে।
বড় মলংচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই চৌধুরী বলেন, ইউনিয়নের বিরাট অংশ নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ বিভিন্ন উপজেলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। এছাড়া কিছু লোক মেঘনা নদীর বুকে জেঁগে ওঠা নতুন চর রাইয়ানে বসবাস করছেন। বিনা নির্বাচনে ২১ বছর ক্ষমতায় আছেন এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। বিভিন্ন সময় মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাচন বন্ধ করে তিনি ইউনিয়নটিতে একক রাজত্ব কায়েম করেছেন।
বড় মলংচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূরনবী সিকদার জানান, ইউনিয়নটির ৯০ শতাংশ মেঘনা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন নতুন করে একটি চর জেঁগেছে। সেখানে মানুষজনের বসতি শুরু হয়েছে। ওই চরে ৮টি ওয়ার্ড পুনঃর্গঠনের কার্যক্রম চলছে। সেটি সম্পূর্ণ হলেই হয়তো নির্বাচন হবে। এছাড়া নির্বাচন বন্ধের পেছনে আমার কোনো হাত নেই।
এ বিষয়ে তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন বলেন, বড় মলংচড়া ইউনিয়নটির অধিকাংশ এলাকাই নদীতে ভেঙে গেছে। এখন একটি মাত্র ওয়ার্ড রয়েছে। নতুন জেঁগে ওঠা চরে বর্তমানে তেমন বসতি না থাকলেও কাগজে-কলমে আরো ৮টি ওয়ার্ড পুনঃবিন্যাশের চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। যা কোনোভাবেই সম্ভব না। তবে স্থানীয় সরকার শাখা যদি এই ইউনিয়নের ওয়ার্ড পুনঃবিন্যাশ করে তাহলে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লালমোহননিউজ/ -এইচপি