বছরের পর বছর যায়, তবুও হয় না একটি পাকা ভবন
লালমোহনের বাংলা বাজার মাহমুদিয়া দাখিল মাদরাসা
প্রত্যন্ত গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়াতে ১৯৮৪ সালে ভোলার লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাংলা বাজার মাহমুদিয়া দাখিল মাদরাসা’। ১৯৮৭ সালে এমপিওভুক্ত হয় মাদরাসাটি। এমপিওভুক্তের অন্তত ৩৭ বছর অতিবাহিত হলেও একটি পাকা ভবন হয়নি মাদরাসাটির। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত টিনশেড ঘরেই চলছে মাদরাসাটির শিক্ষাকার্যক্রম।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাদরাসার টিনশেড শ্রেণিকক্ষগুলোর। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে শিক্ষকরা তাদের নিজস্ব উদ্যোগে তা মেরামত করেন। গত ১০ বছর ধরে একেবারেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে মাদরাসার শিক্ষক মিলনায়তনসহ শ্রেণিকক্ষগুলো। সম্প্রতি লালমোহনের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে বর্তমানে কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ পুরোপুরি ভেঙে গেছে। এছাড়া কয়েকটি শ্রেণিকক্ষের ওপরের টিন ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। বর্তমানে বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে ভিজে যায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ তাদের বইখাতা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
বাংলা বাজার মাহমুদিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা মো. মতিউল ইসলাম বলেন, আমাদের মাদরাসায় প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে ৫৩০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিদিন সাড়ে তিনশতরও অধিক শিক্ষার্থী মাদরাসায় নিয়মিত উপস্থিত থাকে। এসব শিক্ষার্থী বছরের পর বছর চরম দুর্ভোগ নিয়ে লেখাপড়া করছে মাদরাসায়। প্রতিবছর এ মাদরাসা থেকে শিক্ষার্থীরা জেডিসি এবং দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষার ফলাফলও সন্তোষজনক। ১৯৮৪ সালে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর ৮৭ সালে মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত হয়। এরপর থেকে অন্তত ৩৭ বছর পেরিয়ে গেলেও টিনশেড ঘরেই এখন পর্যন্ত চলছে শিক্ষাকার্যক্রম। আমরা একটি পাকা ভবনের জন্য অপেক্ষায় আছি বহুবছর। তবে আমাদের সেই অপেক্ষা, অপেক্ষাই থেকে যাচ্ছে, পাকা ভবন আর হয় না।
তিনি আরো বলেন, মাদরাসার টিনের ঘরগুলো এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় শিক্ষক-শিক্ষর্র্থীদের নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছি। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান ও অফিসের কার্যক্রম। বর্ষায় সামান্য ঝড় হলেই আতঙ্কে থাকি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে। এজন্য মাদরাসার একটি পাকা ভবন নির্মাণের জন্য বারবার সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করে যাচ্ছি। তবে এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাকার্যক্রম আরো বেগবান করতে শিগগিরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি পাকা ভবন নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাংলা বাজার মাহমুদিয়া দাখিল মাদরাসার অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাওয়া, সালেহা এবং নুপুর জানায়, রোদ-বৃষ্টি, দুই সময়েই আমাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যখন প্রচন্ড রোদ থাকে তখন সূর্যের তাপে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল পর্যন্ত টিনের চালা গরম হয়ে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। আবার যখন বৃষ্টি হয়, তখন টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে ভিজে যায় বই-খাতা। তখন শ্রেণিকক্ষের মধ্যে বসে থাকাও অনেক কষ্টের হয়ে যায়। তাই আমরা দ্রুত মাদরাসার জন্য একটি পাকা ভবন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার মদন মোহন মন্ডল বলেন, উপজেলার অন্যান্য মাদরাসার তুলনায় বাংলা বাজার মাহমুদিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থী অনেক বেশি। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার মানও অনেক ভালো। বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলও যথেষ্ট সন্তোষজনক। আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি, টিনশেড ঘরে থেকেও মাদরাসাটি ভালো করছে। যার জন্য সেখানে একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা দরকার। বর্তমানে লালমোহন উপজেলায় কিছু মাদরাসার পাকা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। বাংলা বাজার মাহমুদিয়া দাখিল মাদরাসার পাকা ভবন নির্মাণ এই মুহূর্তে অপেক্ষমাণ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। আশা করছি ওই মাদরাসার নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হয়ে বরাদ্দ প্রদান করবেন।
লালমোহননিউজ/ -এইচপি