ভোলায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নির্বিচারে চিংড়ির রেণু নিধন
আগামী ৫ বছরে বিলুপ্ত হতে পারে শত শত প্রজাতির মাছ: অভিজ্ঞদের অভিমত
নীল রতন, বিশেষ প্রতিনিধি: ভোলার বোরহানউদ্দিন, দৌলতখাঁন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন, উপজেলার মেঘনা নদী ও জেগে ওঠা ডুবোচরে অবাধে মশারি জাল, বিহিন্দী সহ নানা প্রকার বাহারী জাল দিয়ে নির্বিচারে চিংড়ির রেণু (গলদা, বাগদা চিংড়ি) নিধনের মহোৎসব চলছে। এসব রেণু ধরতে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য মাছের রেণু ধ্বংস হচ্ছে প্রতিদিন। অভিযোগ উঠেছে মৎস বিভাগ, নৌ-পুলিশ সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসসের সহায়তায় এসব নিষিদ্ধ রেণু সড়ক ও নদীপথে বড় বড় ড্রাম কিংবা পাতিল ভর্তি করে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করছে একটি প্রভাবশালী চক্র।
মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, একটি চিংড়ির রেণু (পিএল-পোস্ট লাম্বা) ধরার জন্য অন্য প্রজাতির নয় থেকে ১২টি রেণু ধ্বংস করা হচ্ছে। এর মধ্যে দুইশত প্রজাতির মাছ, বিভিন্ন প্রকারের জলজপ্রাণী ও খাদ্যকণা প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে। যে কারণে মেঘনা নদীতে অন্য প্রজাতির মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণীর ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমশ ভেঙে পড়ছে জলজপ্রাণীর বাস্তুসংস্থান বা আন্তঃনির্ভরশীলতা। এ কারণেই ২০০১ সালে সরকার বাগদা ও গলদা প্রজাতির রেণু আহরণ ও সংরক্ষণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিস বলছে, তাদের নজরদারি আছে। তবে বাগদা, গলদা নিধনে উপজেলা প্রশাসন কিংবা মৎস প্রশাসনের কোন অভিযান চলতি মৌসুমে চোখে পড়েনি। অবশ্য ভোলা জেলা মৎস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব যুগান্তরকে বলেন, এমন কয়েকটি অভিযোগ তিনি পেয়ে নিজে তদন্ত করছেন, তার কোন উপজেলার মৎস বিভাগের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী রেনু পাচারের সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে । বিভিন্ন উপজেলার মেঘনা নদীর পাড় ঘুরে দেখা গেছে, অন্তত ৯-১০ হাজার শিশু-কিশোরসহ নারী-পুরুষ রাতদিন মেঘনা ও মেঘনার ডুবোচরের বিভিন্ন স্থান থেকে গলদা-বাগদার রেণু ধরছে।
পুরো ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশনের তিন-চারজন স্থানীয় প্রভাবশালী। এর সঙ্গে যুক্ত আছে মেঘনা নদীতে টহলরত সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের লোকজন, আড়তদার ও ঘের মালিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। প্রকাশ্যে বাগদা ও গলদা নিধনের ব্যাপারে জানতে চাইলে কোষ্টগার্ড তজুমদ্দিন ফাঁড়ির কর্মকতারা কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি । প্রভাবশালী ও আড়তদাররা দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অভাবগ্রস্ত লোকজনকে পোনা শিকার করতে বাধ্য করছে। অভিযোগ উঠেছে, অজ্ঞাত কারণে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ, নৌ-পুলিশ, কোষ্টগার্ড এদিকে কোনো নজরদারি দিচ্ছেননা।
মেঘনা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, অসংখ্য মানুষ রেণু শিকারের সঙ্গে শত শত প্রজাতির মাছ নিধন করছে। ঘাটগুলো হচ্ছে, বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাকিমুদ্দিন ঘাট, মৃজাকালু মাছঘাট, স্লুইস গেট ঘাট, নবাব মিয়ার হাটঘাট, আলীমুদ্দিন ঘাট ও বাংলাবাজার ঘাট,তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর স্লুইজ ঘাট, তজুমদ্দিন মাছ ঘাট, লালমোহন উপজেলার কাটাখালি ঘাট , লালমোহন মঙ্গল সিকদার ঘাট, লালমোহন বাতির খাল ঘাট , চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া ঘাট, চরফ্যাশন বড় স্লুজই ঘাট(বেতুয়া ) , দক্ষিন আইচা পাঁচ কপাট ঘাট । প্রতিবার জাল ফেলে সাত থেকে আটটি চিংড়ির রেণু পেলেও তার সঙ্গে উঠে আসছে শত শত প্রজাতির অসংখ্য মাছের পোনা।
চিংড়ি পোনা আলাদা করে ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, কলস ও অন্যান্য পাত্রে জিইয়ে রাখলেও অন্য প্রজাতির মাছের পোনাগুলো ডাঙায় অথবা চরে ফেলে দেয়ায় সেগুলো মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া মেঘনার বেড়িবাঁধের ওপর চরফ্যাশন, লালমোহন তজুমদ্দিন, বোরহানউদ্দিন ,দৌলতখাঁন উপজেলার সীমানার মধ্যে কয়েকশ’ রেণু কেনার অস্থায়ী অবৈধ আড়ত দেখা গেছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, কতিপয় প্রভাবশালী দালাল জেলেদের এক প্রকার জোরপূর্বক বিহিন্দী জাল, মশারি জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে রেণু নিধন করাচ্ছে। অনুসন্ধানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এসকল অবৈধ গলদা , বাগদার রেনু ট্রলারে করে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীররাত পর্যন্ত পাচার হয় লালমোহন উপজেলার গজারিয়া খালগোড়া, নাজিপুর লঞ্চ ঘাট, দেবীর চর বড় পোলের নিচ দিয়ে ।
মেঘনার হাকিমদ্দিন নৌ পুলিশের ওসি মোশারফ হোসেনের অফিসের সামনে এবং চারপশে হাজার হাজার লোকজন রেনু শিকার করার ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসি জানান তিনি রেনু শিকারের ব্যাপারে কিছুই জানেন না ।
লালমোহননিউজ/ -এইচপি