ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা ও দাবি-দাওয়া নিয়ে কিছু কথা...

ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা ও দাবি-দাওয়া নিয়ে কিছু কথা...
লেখকের ছবি

গার্মেন্টস শিল্পসহ বৃহৎ শিল্পকারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ভোলার গ্যাসের পুরোদমে ব্যবহার করার কথা জানালেন জ্বালানি উপদেষ্টা মহোদয়। প্রাকৃতিক গ্যাস ও পর্যাপ্ত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ আমাদের দ্বীপ ভোলা জেলা। স্বাভাবিকভাবেই অন্য জেলার তুলনায় ভোলা সবচেয়ে উন্নত জেলা হওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে!

অথচ আমাদের ভোলার মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবহেলিত, নিপীড়িত এবং উন্নয়ন বঞ্চিত! করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে না উঠতেই অনাকাঙ্ক্ষিত রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের ফলে যেখানে গোটা ইউরোপে টালমাটাল, সেখানে ভোলায় নতুন গ্যাসের সন্ধান নি:সন্দেহে অন্ধকারে আলোর মুখ দেখার সামিল। দেশের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি গ্যাসকূপ ভোলায়।

সম্প্রতি ইলিশা এলাকায় আরও একটি গ্যাসকুপ পাওয়া গেছে যেখান থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। ১৯৮৬ সালে প্রথম গ্যাসকুপ আবিস্কারের পর গ্যাসভিত্তিক সার কারখানাসহ ব্যাপক শিল্পায়নের মাধ্যমে ভোলায় প্রচুর কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখানো হলেও এযাবৎ কাঙ্ক্ষিতহারে শিল্প-কারখানা স্থাপিত না হওয়ায় এ অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান হয়নি। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে স্থাপিত কারখানাগুলোর অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়।

ভোলার মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ভোলা-বরিশাল সেতু, ভোলা-লক্ষীপুর সেতু, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, মেডিকেল কলেজ, ক্যাডেট কলেজ ইত্যাদি কিছুই হয়নি। মজু চৌধুরী ঘাট এবং ইলিশা ঘাটের যাত্রী ভোগান্তি দিনদিন চরম আকার ধারণ করছে। ভোলায় প্রাপ্ত গ্যাস ও উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত করে দেশের উন্নয়নে যুগান্তকারী অবদান রাখলেও ভোলার মানুষ গ্যাস পাচ্ছেন না।

অপরদিকে কাঙ্ক্ষিতহারে বিদ্যুৎ না পেয়ে অনেকে ভোলাকে তৎকালীন অখণ্ড পাকিস্তানের পুর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করছেন, যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারেনা! কিছু সামাজিক সংগঠন ভোলা জেলার উন্নয়নে দৌড়ঝাঁপ করলেও দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে কাংখিত সহযোগিতা না পাওয়ায় সবক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া যায়না। সুতরাং, নিজেদের দুর্দশা লাঘবে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তোলার এখনই চুড়ান্ত সময় - দাবীসমূহ :

১. অনতিবিলম্বে ভোলা-বরিশাল সেতু এবং ভোলা-লক্ষীপুর সেতু/ টানেল নির্মাণের মাধ্যমে ভোলা জেলাকে দেশের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

২. শিক্ষা ব্যবস্থায় সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুবিদার্থে ভোলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৩. ভোলা জেলার প্রতিটি ঘরে গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

৪. গ্যাসভিত্তিক সার কারখানা স্থাপনসহ ব্যপক শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে;

৫. ইলিশের দুর্গ ভোলায় জেলে এবং মৎস্য ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে আধুনিক ফিশিং জোনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. ভোলায় বিসিক এলাকায় শিল্পোদ্যোক্তা এবং ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৭. দেশী ও বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে।

৮. নদী ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৯. ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

১০. মুমূর্ষু রোগীদের জীবন রক্ষাকারী আধুনিক আইসিইউ ইউনিট প্রতিষ্ঠা এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক হাইস্পিড ওয়াটার এম্বুলেন্স সরবরাহ করতে হবে।

১১. ইতোমধ্যে প্রদত্ত ওয়াটার এম্বুলেন্সগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

১২. আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট ও ফুটবল স্টেডিয়াম তৈরী করতে হবে।

উল্লেখিত ন্যায্য দাবিসমূহ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে একাধিক মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জোরালো দাবি পেশ করার পাশাপাশি হতাশা ও ব্যাপক ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে।

এমতাবস্থায়, পর্যায়ক্রমে উপরিবর্ণিত দাবিগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।"

লিখেছেন: মো: জসিম উদ্দিন, ডিজিএম, বিজেএমসি ও প্রকল্প প্রধান, হাফিজ জুট মিলস, চট্টগ্রাম। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক: ভোলা ডেভেলপমেন্ট ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনিবার্হী পরিষদ।