কবর খুঁড়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় আমির আলী

গাজীপুরের শ্রীপুরে শত বছর বয়সী এক বৃদ্ধ তিন বছর আগে বাড়ির পাশে নিজের জন্য কবর খুঁড়েছেন। কারও সাহায্য ছাড়াই এক সপ্তাহের মধ্যে কবরটি খুঁড়ে এখন সেটির পাশে বসেই মৃত্যুর দিন গুনছেন।
জানা গেছে, নামাজ আদায়সহ দিনের বেশির ভাগ সময় সেখানেই থাকেন তিনি। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বৃদ্ধ আমির আলী (১০০) শ্রীপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের লোহাগাছ গ্রামের মৃত জহুর আলীর ছেলে। তিনি পেশায় কৃষক ছিলেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ১০০ হলেও আমির আলীর দাবি, তার বয়স আরো বেশি।
বৃদ্ধ আমির আলী বলেন, ‘একদিন মারা যেতে হবে এই চিন্তা থেকে গত তিন বছর পূর্বে নিজের কবর খুঁড়েছি। মৃত্যুর পর যাতে আমার জন্য কাউকে কষ্ট না করতে হয়। দিনের বেশির ভাগ সময় খনন করা কবরের পাশে বসে কাটে আমার সময়। নামাজ আদায়সহ বেশির ভাগ সময় কাটায় কবরের পাশে। কবর খোঁড়ার পর কবরের চারপাশে পাকা করা হয়েছে।’
আমির আলী আরো বলেন, ‘মৃত্যুর পর আমার স্বজনেরা যাতে বাড়ির পাশের খননকৃত কবরে আমাকে দাফন করে সে কথাও তাদের বলে যাচ্ছি সব সময়। গরিব মানুষ বাবার ভিটেমাটি ছাড়া তেমন কোনো অর্থবিত্ত নেই। শেষ সময় কষ্টে কাটছে আমার। সরকারি সহায়তা বন্ধ রয়েছে তিন মাস যাবৎ। সেটা চালু হলেও কষ্ট লাঘব হতো।’
তিনি আরো জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁশ কেটে শুকিয়ে কবরের জন্য রেখে যাবেন। যাতে মৃত্যুর পর দ্রুত সময়ের মধ্যে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
বৃদ্ধ আমির আলীর স্ত্রী আমেনা খাতুন বলেন, ‘নিজের ইচ্ছায় আমার স্বামী বাড়ির পাশে কবর খুঁড়ে রেখেছেন। তিন বছর আগে এক সপ্তাহ পরিশ্রম করে নিজ হাতে কবর খনন করেছেন। কারও কোনো সাহায্য সহযোগিতা নেয়নি। তিনি কী কারণে নিজের কবর নিজে খুঁড়েছেন সেটি শুধু তিনিই জানেন।’ সন্তানদের বিষয়ে জানতে চাইলে আমেনা খাতুন বলেন, তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দু’জনই বিয়ের পর অন্যত্র থাকে।
লোহাগাছ গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কবর খননের বিষয়টি রীতিমতো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু আমাদের গ্রামের নয়; আশপাশের এলাকার মানুষও আসছে দেখার জন্য। কী কারণে তিনি জীবিত অবস্থায় নিজের কবর খুঁড়েছেন সেটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহল জেগেছে।’
শ্রীপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সাহিদ বলেন, ‘কবর খুঁড়ে কবরের পাশে বসে মৃত্যুর অপেক্ষার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আমিও বেশ কয়েক দিন গিয়েছি। বৃদ্ধ আমির আলীর সঙ্গে কথা বলেছি। তবে কী কারণে কবর খুঁড়ে রেখেছেন তা জানতে পারিনি।’
শ্রীপুর মফিজিয়া মাদ্রাসার প্রধান মুহতামীম মুফতি শামীম আহমদ বলেন, ‘ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি সঠিক নয়। মৃত্যুর পর তার স্বজনেরা তার কবর খুঁড়ে দাফন-কাফন করবে এটাই বাস্তব।’
জানতে চাইলে শ্রীপুর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি কাপাসিয়া থেকে মাঝেমধ্যে শ্রীপুরে অফিস করছি। তিন মাস যাবৎ শ্রীপুরে সমাজ সেবা কর্মকর্তা বদলি হয়েছে। এখনো কোনো অফিসার আসেনি। আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। কাগজপত্র না দেখে ভাতা বন্ধের বিষয়টি বলা যাবে না।’
লালমোহননিউজ/ -এইচপি