লালমোহননিউজ২৪ডটকম।। ইনিংসের শেষ ওভারে পর পর দুটি বাউন্সার। একটিও ওয়াইড দিলেন না শ্রীলঙ্কান আম্পায়ার! এর মধ্যে দ্বিতীয় বলে রান আউট হয়ে গেলেন মোস্তাফিজুর রহমান। এর মধ্যেই হঠাৎ মাঠের পাশে নেমে এলেন সাকিব আল হাসান। একটু পরেই মাঠে জড়ো হলেন আরও কজন। মাঠে মাহমুদউল্লাহ উত্তেজিত কণ্ঠে কথা বলছেন আম্পায়ারদের সঙ্গে। মাঠ থেকে এর মধ্যে ব্যাটসম্যানদের চলে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছেন সাকিব। কী হচ্ছে মাঠে?
সব মিলিয়ে হযবরল অবস্থা। ৪ বলে ১২ রান দরকার, এমন অবস্থায় কি তবে ম্যাচ থেমে যাবে? শেষ ওভারে আম্পায়ারের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ কি আসলেই মাঠে ছেড়ে উঠে আসার ঘটনা ঘটাবে? তাহলে যে ডিসকোয়ালিফাইড হবে বাংলাদেশ। এই বিতর্ক গড়াবে আরও বহু দূর। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটেই ম্যাচ বয়কটের ঘটনা আছে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে, যেটি আজও আলোচিত হয়। শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় সম্পর্কেও দাগ থেকে যেত সন্দেহ নেই।
কিন্তু মাথা ঠান্ডা করল দল। ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ ব্যাট করতে পাঠালেন মাহমুদউল্লাহকে। সাকিবকে ঠেলেঠুলে ড্রেসিংরুমে পাঠানো হলো। আউট হয়ে সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাকিব। পায়ের প্যাড পর্যন্ত খোলেননি। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভীষণ উত্তপ্ত।
বাংলাদেশের সৌভাগ্য, এ সময়ে উইকেটে ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে ঠান্ডা মাথার মানুষটা। মাহমুদউল্লাহ বোঝালেন তাঁর মাথা আসলেই কত ঠান্ডা। চার, দুই এবং…ছক্কা! এক বল বাকি রেখেই বাংলাদেশের জয়।
ঝামেলাটা সৃষ্টি করেছেন শ্রীলঙ্কান আম্পায়ারই। লেগ আম্পায়ার দ্বিতীয় বাউন্সারকে নো-বল দেখিয়েছিলেন কিন্তু মূল আম্পায়ার সেটা অগ্রাহ্য করেছেন। ওই সময়ে একটি বাড়তি রান, বাড়তি বল ও ফ্রি হিটের মূল্য যে অপরিসীম। রিপ্লেতেও দেখা দ্বিতীয় বলটি প্রথম বাউন্সারেরও ওপর দিয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের রাগের কারণ ছিল, তবে সেটা সামলে মাঠে থাকাটাই শেষ পর্যন্ত কাজে লেগেছে। আজীবন গল্প করার মতো এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশের মানুষ।
উত্তেজনার সব রং-রূপ ধরা পড়লো আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের ম্যাচে। কী ছিল না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চের সব উপাদান হাজির ছিল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে। তবে শেষের উত্তেজনা ছাড়িয়ে গেছে সবকিছুকে। বিতর্কিত আম্পায়ারিং, নুরুল হাসান-কুশল মেন্ডিসের কথার লড়াই, সাকিবের মাঠ ছেড়ে আসার ইঙ্গিত- সব বিতর্কের জবাব মিললো মাহমুদউল্লাহর এক ছক্কায়।
শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১২ রান। প্রথম দুই বলে ডট ও মোস্তাফিজের আউটে ৪ বলে দরকার পড়ে ১২ রান। জমে যাওয়া উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালে ইসুরু উদানার পরপর দুটি বাউন্স। মোস্তাফিজের মাথার ওপর দিয়ে বল যাওয়ার পরও কেন ‘নো’ বল ডাকা হলো না, তা নিয়ে বেঁধে যায় দ্বন্দ্ব। অবস্থা এতটাই গুরুতর হয়ে পড়েছিল যে, সাকিব খেলাই বন্ধ করে দেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন!
ক্রিজে আশার শেষ প্রদীপ হয়ে জ্বলে থাকা মাহমুদউল্লাহ অবশ্য অধিনায়কের ডাকে সাড়া দেননি। মনে বিশ্বাস থাকলে নাকি সব বাধা ডিঙানো যায়- কথাটা কতটা সত্যি, তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ দিলেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ ২ বলে যখন দরকার ৬ রান, ওই মুহূর্তে বাঘের গর্জন তুলে উদানার বল নিয়ে ফেললেন গ্যালারিতে। ব্যস, ওই এক শটেই সব জবাব দেওয়া হয়ে গেল বাংলাদেশের।
ততক্ষণে বাধভাঙা আনন্দে মাতোয়ারা টাইগাররা। একজন আরেকজনের গায়ের ওপর লাফিয়ে উঠছে, সেই সঙ্গে চললো শ্রীলঙ্কা ও ‘বাজে’ আম্পায়ারিংয়ের জবাব দেওয়ার পর্ব। একই সাথে চললো পুরো দলের মুসফিকের দেখানো নাগিন ড্যান্স।
তবে তখনও শেষ হয়নি কুশল মেন্ডিস-নুরুলের কথার লড়াই। তেড়ে যাচ্ছিলেন একজন আরেকজনের দিকে। পরিস্থিতি সামাল দিলেন তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ। মাঠ থেকে তাদের বেরিয়ে যাওয়ার পর ওই উত্তাপের আঁচ কমলেও বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের জন্য স্মৃতিতে বাঁধিয়ে রাখার মতোই এক ম্যাচ মঞ্চায়িত হলো আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে।
বিতর্কিত আম্পায়ারিং আরেকবার থাবা মারলো বাংলাদেশের ক্রিকেটের গায়ে। ম্যাচের অমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হঠাৎ কী এমন হলো যে সাকিব খেলাই ছেড়ে দিতে চাইলেন? উত্তর মিলেছে তামিম ইকবালের কথায়। টানা দুটি বাউন্স দেওয়ায় লেগ আম্পায়ার নাকি ‘নো’ ডেকেছিলেন, কিন্তু অন্যপ্রান্তে থাকা আরেক আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে কেন এমন আম্পায়ারিং, সেই ক্ষোভ থেকেই ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সাকিব।
গত কয়েক বছরে ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী দল হওয়ার পরও আরেকবার বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের শিকার বাংলাদেশ। সেটাই হয়তো আরও খেপিয়ে দিয়েছিল মাহমুদউল্লাহ। বিশাল এক ছক্কায় মনের সব ক্ষোভ মেটালেন তিনি। যে ছক্কায় আনন্দের স্রোতে ভাসলো ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ।
‘বিএনপিকে জবাব দিতে আ.লীগ মাঠে থাকবে: তোফায়েল আহমেদ’
1553 Shares Share on Facebook Share on Twitter আওয়ামী লীগ......বিস্তারিত