বিখ্যাত ফ্যাশন পত্রিকাগুলোর কভার থেকে শুরু করে হলিউড সিনেমার দৃশ্য— বিকিনি পরা লাস্যময়ী সুন্দরীদের দেখে রক্ত উথালপাথাল হয় না এমন পুরুষ বিশ্বে বিরল। ব্রাজিলকে বিশ্ব চেনে ফুটবল আর সৈকতে বিকিনি পরা তামাটে সুন্দরীদের জন্য। আপনি স্বীকার করুন বা না-ই করুন, বিকিনি পরার জন্য অনেক বাংলাদেশিও দেশের বিভিন্ন তারকা হোটেল ও রিসোর্টে ঘুরতে যান। তাই বিকিনিকে রক্তে নেশা লাগানো পোশাক বললে অত্যুক্তি হবে না।
আচ্ছা, বলুন তো; বিকিনির আবিষ্কারক কে? কখন বিকিনি আবিষ্কৃত হয়? বেশিরভাগ মানুষের কাছেই এই প্রশ্নটির উত্তর জানা নেই। অথচ এই পোশাকই বিশেষ নানা দেশে ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া সব মানুষই এই পোশাকের সঙ্গে পরিচিত।
ফ্রান্সের এক ডিজাইনারের হাতেই সৃষ্টি হয় বিকিনি’র। লুইস রেয়ার্ড সর্বপ্রথম দেখালেন ‘টু-পিস’ পোষাকে একজন মহিলার দর্শনের নন্দনতত্ত্ব, আর তার সঙ্গে অবশ্যই জুড়তে হয় সাহসিকতার কথাটিও। সুইমিং পুলে শরীরে কেবল দুটি পিস কাপড়ে নারী শরীরের মাছ হয়ে ওঠার গল্প কথার শুরু তো সেই দিন থেকেই।
এই বিকিনি শব্দটি কোথা থেকে এসেছে জানেন? মাইক্রোনেশিয়ার ছোট্ট দেশ মার্শাল আইল্যান্ড মূলত অনেকগুলো দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। সেখানে ২৩টি ছোট ছোট প্রবালদ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত বিকিনি অ্যাটল (বাংলা অর্থ হয় নারকেলের বাগান) নামের একটি প্রবালপ্রাচীর আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমানবিক বোমার পরীক্ষা এখানে চালানো হতো। ১৯৪৬ থেকে ৫৮ পর্যন্ত এখানে ২৩ টি পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটনা হয়। কেন বিকিনি এটলের নামে এই পোশাকের নাম রাখা হলো জানতে চাইলে রেয়ার্ড বলেন, ‘এই পোশাক বাণিজ্য ও সংস্কৃতিতে বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। হয়েছেও তাই।
তার পরে দশকের পর দশক ধরে বিবর্তিত হয়েছে বিকিনি। বিশ্বের তাবড় তাবড় ফ্যাশন ডিজাইনারের হাতে পড়ে অনেক নতুনত্ব ও রকমফের এসেছে তাতে। এখন বিকিনির কতো নাম! বানডিউকিনি বা স্ট্র্যাপলেস বিকিনি, মাল্টিস্ট্রিং বিকিনি, স্ট্রিং বিকিনি, মাইক্রোকিনি-টাংকিনি, স্কারটিনি-হাইওয়েস্টেড বিকিনি, ফ্রিঞ্জ বিকিনি, ফ্লাউন্স বিকিনি ইত্যাদি।
যদিও এরও আগে ১৯৩০ সালে ইউরোপে চালু হয়ে গিয়েছিল স্বল্প বসনা সংস্কৃতির। মহিলাদের শরীরে যে জামা কাপড়গুলো প্রথমে দেখা যেত, তার থেকে সেগুলো ক্রম বিবর্তিত হতে হতে অবলুপ্তির পথ অনুসরণ করে, অর্থাৎ ছোট থেকে আরও ছোট হতে থাকে। একথা বলতেই হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই নারী শর্টস পড়তে শুরু করে দিয়েছিল।
১৯৬০ সাল থেকে বিকিনির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও ইউরোপের দেশগুলোতেও বিকিনি ছড়িয়ে পড়ে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এখন ইউরোপীয় সংস্কৃতির একটি অঙ্গ হিসেবে বিকিনি গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে। হলিউড, বলিউড, টলিউড কিংবা টেলিউড এখন বিকিনি যেন ‘দত্তক পোষাক’-এর ঘোরে।
১৯০৭-এর দিকে পুনরায় আধুনিক বিকিনির প্রচলন ঘটতে শুরু করে, যখন অস্ট্রেলীয় সাঁতারু অ্যানেট কিলারম্যান বস্টনে একপ্রস্থ কাপড় বিশিষ্ট সাঁতারের পোশাক পরার অপরাধে গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে ১৯১০ সালে মেয়েদের এ ধরনের সাঁতারের পোশাক জনসম্মুখে পরার স্বীকৃতি পায়। তার সেই বিকিনি পরিহিতা ছবির প্রকাশনা নিয়ে এসকোয়ার ম্যাগাজিন ও ইউনাইটেড স্টেটস পোস্টমাস্টার জেনারেলের মধ্যে আইনি লড়াই চলে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত।
১৯১৩ সালে অলিম্পিকে সাঁতারের ইভেন্টের জন্য ফ্যাশন ডিজাইনার কার্ল জ্যান্টজেন প্রথমবারের মতো সাঁতারের জন্য দুই-প্রস্থ বিশিষ্ট পোশাক তৈরি করেন। এটির নিম্নাংশে ছিল আটোসাটো একপ্রস্থ শর্টস, এবং উর্দ্ধাঙ্গ আবরণী হিসেবে হাতাকাটা টপ। নতুন ধরনের বস্ত্র তৈরির উপাদান লাস্টেক্স ও নাইলন আবিষ্কৃত হবার পর, ১৯৩৪ সালের দিকে সাঁতারের পোশাক শরীরের সঙ্গে আরো বেশি লেগে থাকতে শরু করে, এবং ট্যানিংয়ের সুবিধার্থে কাঁধে স্ট্যাপের প্রচলন শুরু হয়।
‘৮৩ বছর বয়সে ৩৫ বছরের স্ত্রীকে দিলেন মাতৃত্বের স্বাদ!’
1448 Shares Share on Facebook Share on Twitter বয়স যে......বিস্তারিত