ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলনকারীদের হল থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। আজ বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে লালন শাহ হল থেকে অন্তত ২২ জনকে হল ছাড়া করে তারা। যার ভেতর দুজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানও রয়েছে। শাখা সভাপতি গ্রুপের সালাহউদ্দিন আহমেদ সজল ও আবুল খায়ের মোল্লা তাদের হুমকি দিয়ে নামিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীদের সুত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার সারা দেশের ন্যায় ইবিতেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয় প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী। আন্দোলন বাধাগ্রস্থ করার জন্য দলীয় কর্মীদের অংশ গ্রহণ না করার নির্দেশ দেয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু নির্দেশ উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক ছাত্রলীগ কর্মী আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে। ইবিতে আন্দোলনের শুরুর দিন থেকেই বিরোধীতা করে আসছিল ছাত্রলীগ। প্রতিদিনই আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন হুমকি দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করতো তারা। গতকাল (১১ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কোটার পক্ষে আনন্দ মিছিল করলেও রাতেই প্রতিপক্ষ নীতিতে ফিরে গেছে ছাত্রলীগ। গতকাল বুধবার রাত সোয়া এগারোটার দিকে আন্দোলনকারীদের সজল তার রুমে ডেকে নেয়। এ সময় তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয় সে। এর আগে সন্ধ্যায় সভাপতি শাহিন হলে এসে তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেও জানা যায়। সকাল দশটার ভেতর তাদেরকে হল থেকে নেমে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়।
পরে আজ বৃহস্পতিবার সকালে শাখা সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন নিয়ন্ত্রিত ওই হল থেকে আন্দোলনকারীদের জোর পূর্বক নামিয়ে দেয়া হয়। ভুক্তভূগী শিক্ষার্থীরা হলেন লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের হাবিব, আশরাফুল, মেহেদী, লিমন, ফয়সাল, শাকিল, মেহেদী হাসান, নাইম, শিমুল, একই শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিল্লাল, আশিক এবং ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আশিক ও নিশাতসহ অন্যান্যরা।
সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, এখনো খোঁজ চলছে। আরো যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত ছিল তাদেরকেও বের করে দেয়া হবে। ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বিল্লাল ও আহসানুর বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কোটা সংস্কারের বিপক্ষে না থেকে যৌক্তিক আন্দোলনে শরিক হওয়াই আমাদের দোষ।’
এছাড়া নাইম, রাসেল, আশরাফুল, রাব্বুল, রবিউল, মেহেদী, রাশেদ, আশিকসহ অন্যান্য ভুক্তভোগীরা জানান, ‘সারা দেশে যৌক্তিক আন্দোলন হয়েছে। আমাদের ভাই-বোনেরা মার খাচ্ছে। আমরা এসব সহ্য করতে না পেরে আন্দোলনে শরিক হয়েছি। অথচ লালন শাহ হলে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় আমরাই সামনে ছিলাম। আজ হুমকি দিয়ে আমাদের নামিয়ে দেওয়া হলো।’
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা সজল বলেন, ‘দলীয় কমান্ড ভঙ্গ করায় তাদের হল থেকে নেমে যেতে নির্দেশ দিয়েছি। এটা সম্পূর্ণ আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয়।’ এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিনকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে লালন শাহ হলের প্রভোষ্ট অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখনো কিছু জানিনা। তবে ভুক্তভোগীদের ভেতর কেউ যদি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী থাকে তাহলে তাদের ব্যাপারে আমরা দেখবো।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম নাহিদ বলেন, হল থেকে বের করার বা মারধর করার কোন রকম সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় কমিটি নেয়নি। কোটা আন্দোলনের বিষয়ে সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও মনস্তাত্তিকভাবে আমাদের সমর্থন ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, ‘অভিযুক্তরা অভিযোগ করলে সেটি বিবেচনা করে প্রচলিত ব্যবস্থায় আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করবো।’
‘বিএনপিকে জবাব দিতে আ.লীগ মাঠে থাকবে: তোফায়েল আহমেদ’
1553 Shares Share on Facebook Share on Twitter আওয়ামী লীগ......বিস্তারিত