হাসান পিন্টু।। দেশের দক্ষিণ জনপদে জেকে বসেছে শীত। বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে ভোলা জেলার লালমোহনসহ ৭ উপজেলার প্রায় ২ লাখ নিন্ম আয়ের (দরিদ্র) মানুষ।
শীত মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসনের প্রস্তুতি খুব সামান্য। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত নদী বেষ্টিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এছাড়া শীতজনিত রোগের প্রদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভোলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোরের দিকে তা ১১. ০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।
গত কয়েক দিনের থেকে রবিবার শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে এই দক্ষিণের জনজীবন। শীতের তীব্রতা আর সূর্যের লুকোচুরি খেলার সাথে চলমান মৃদু শীতল হাওয়া দেখে মনে হয় বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টি নেই। বেড়েই চলেছে শীতের তীব্রতা।
এতে লালমোহন পৌর শহরসহ গ্রামাঞ্চলের হাট বাজারেও কমেছে লোকের আনাগোনা। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। এমন অবস্থায় দিনমজুর, হত দরিদ্র মানুষগুলোর জীবনে নেমে এসেছে অসহনীয় কষ্ট।
লালমোহনের চর-কচুয়াখালীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানকার অধিকাংশ মানুষ নিম্নশ্রেণীর হওয়ায় শীতে তাদের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেকের মজুর শ্রমিকের কাজ করার ইচ্ছা থাকলেও শীতে কাহিল হয়ে পড়ায় ঘরের বাহির হতে পারছেন না। এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
গজারিয়ার মাসুম ও ফরিদসহ চর কচুয়াখালীর কয়েকজন বাসিন্দাদা জানান, তারা অনেকেই প্রচন্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে রবিশস্যের ক্ষেতে কাজ করছিলেন। সাথে নিয়ে এসেছেন আগুন পোহানের জন্য খড়। কাজের ফাঁকে শরীরকে তাপ দিতে তাদের আগুন জ্বালিয়ে পোহাতে দেখা গেছে গতকাল রবিবার বেলা ৩টার সময়।
তারা জানান, ‘মাজে মাজে (মাঝে মাঝে) আগুন না পোয়াইলে হাত-পাঁও বেকা হইয়া (অবস হয়), কাম করা যায় না।’ এভাবেই তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন শ্রমজীবি মানুষেরা।
উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের গ্রামের চাঁন মিয়া বলেন, ‘ঠান্ডাত সারা রাইত নিন (ঘুম) আইয়ে না।’ একই গ্রামের আব্দুল লতিফ, জাহেদা বেগম ও মায়া বেগম বলেন, দুই দিন না খ্যায়া থাকা যায়, কিন্তুক এতো ঠান্ডা সওয়া যায় না।’
এদিকে প্রচন্ড শীতের কারণে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে সহায়-সম্বলহীন হতদরিদ্র লোকজন। শীতবস্ত্রের অভাবে তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। শীতের কারণে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েট জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শীতজনিত কারণে আগের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশী।
ভোলা আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, একটু দেরিতে হলেও চলতি সপ্তাহ থেকে এ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। অনেক স্থানে দুপুর পর্যন্ত মানুষ সূর্যের মুখ দেখছে না। কোথাও বা দেখা গেলেও তা ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য। দু-এক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরো কমবে বলে নিশ্চিত করে আবহাওয়া অফিস জানায়, একই সঙ্গে উত্তরা বাতাস বইবে। তখন মৃদু থেকে মাঝারি শৈতপ্রবাহ বইবে এ অঞ্চলে।